

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন ঘিরে আলোচনা থাকলেও নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে তৈরি হয়েছে হতাশা।
মোট ১৯টি পদের মধ্যে শীর্ষ তিন পদসহ (ভিপি, জিএস ও এজিএস) ১৬টি পদেই নেই কোনো নারী প্রার্থী। পুরো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯৭ জন প্রার্থী, যার মধ্যে নারী মাত্র ৭ জন।
শাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে চারজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন এবং সদস্য পদে দুজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। বাকি ৯০ জনই পুরুষ প্রার্থী। ফলে মোট প্রার্থীর তুলনায় নারী প্রার্থীর হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ২১ শতাংশ।
শাকসু নির্বাচনের জন্য ঘোষিত প্যানেল অনুযায়ী, ছাত্রদল সমর্থিত ‘সম্মিলিত সাস্টিয়ান ঐক্য’ প্যানেলে একজন নারী প্রার্থী আছেন।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘দুর্বার সাস্টিয়ান ঐক্য’ প্যানেলে তিনজন নারী প্রার্থী লড়ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘সাধারণের ঐক্যস্বর’ প্যানেল থেকে দুজন নারী প্রার্থী আছেন। এর বাইরে প্যানেল ছাড়া ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন নারী প্রার্থী নির্বাচন করছেন।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৫ জন নারী প্রার্থী সংসদে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেও মাত্র সাতজন নারী প্রার্থী কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ বিষয়ে নারী প্রার্থী ও ছাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা এনপিবিকে বলেন, ট্যাগিংয়ের ভয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং, রাজনৈতিক চাপ এবং দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিই নারী শিক্ষার্থীদের নির্বাচনমুখী হতে নিরুৎসাহিত করছে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘দুর্বার সাস্টিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের সদস্য পদপ্রার্থী আদিবা সালেহা বলেন, ‘একজন নারী শিক্ষার্থীর নির্বাচন না করার পিছনে আর্থিক ও পারিবারিক বাধা থাকতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত সময়ে আমরা দেখেছি নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি নোংরা অ্যাটাক করা হয়েছে, অনলাইনে বুলিং করা হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য।
এই অ্যাটাকারদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয় নাই। সুতরাং, খুব স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলকভাবে মেয়েদের জন্য নির্বাচন করা, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা এখনো কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েদের পলিসি তৈরিতে অংশগ্রহণ এমনিতেই কম। বিগত সময়ের ট্যাগিং কালচার এখনও বিদ্যমান থাকায় মেয়েরা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করা দূরের বিষয়, রাজনীতিকে নোংরা বিষয় ভেবে ভোট দিতেও অনাগ্রহ বোধ করছেন।’
নারী প্রার্থী কম হওয়ার বিষয়ে শাকসু নির্বাচনের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত ছাত্রীরা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যদিও শাকসু একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। তারপরও এখানে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ লাগে। রাজনৈতিক আলাপ–আলোচনা হয়। এছাড়া এখানে সময় দেওয়া লাগে প্রচুর।
নির্বাচিত হয়ে গেলেও অনেক কাজ আছে। হয়তো ছাত্রীরা মনে করছে যে এতে তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিগত দিনগুলোতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক নারী প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে, জয়ী হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর বিশেষ করে নারী প্রার্থীরা রাজনৈতিক কারণে সাইবার বুলিং, তাদের নিয়ে স্লাট শেমিং করা হয়েছে।
অনলাইনে বা অফলাইনে তারা হেনস্তার শিকার হয়েছে। এসব কারণে হয়তো শাকসুতে উল্লেখযোগ্যভাবে নারী প্রার্থী নেই। এসবের কারণে ছাত্রীদের পরিবার থেকেও প্রার্থী হতে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
মন্তব্য করুন
