বাবার কারণে ছেলের মৃত্যু, ২৭ ঘণ্টা পর হলো দাফন

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ক্যাডেট কলেজ এলাকার হলিদ্রাচালা গ্রামে ‎‎বাবার কারণে ছেলে আত্মহত্যা কারার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার ২৭ ঘণ্টা পরে নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় গোড়াই এলাকায় প্রথম জানাজা এবং দুপুর ২টার সময় ছেলের মৃত্যুর ২৭ ঘণ্টা পরে তার বাবার বাড়িতেই দ্বিতীয় জানাজা পড়ে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এদিকে পারিবারিক কলহের জেরে মৃত্যুর খবর শুনেও ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত ছেলের মুখ দেখেননি বাবা। পরে ছেলের ফুফুসহ আরও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসে নিহতের লাশ তার বাবার বাড়ি নিয়ে দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করেন।

উল্লেখ্য, নিহত ওই ছেলের নাম মো. জুবায়ের হোসেন (১৪)। তার বাড়ি কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকার ছবিরা গ্রামে। সে ওই এলাকার শাহিন মিয়ার ছেলে। নিহত জুবায়ের মির্জাপুরের গোড়াই রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়ত। জুবায়েরের বাড়ি কালিয়াকৈর উপজেলার ছবিরা এলাকায় হলেও তার বাবা শাহিন মিয়া গোড়াই এলাকায় জমি ক্রয় করে বাসা করেন। সেখানেই বসবাস করত জুবায়ের, তার মা ও একমাত্র ছোট বোন।

স্থানীয়রা জানান, শাহিন মিয়া কয়েক বছর আগে জুবায়েরের মাকে তালাক দিয়ে আরও একাধিক বিয়ে করেন। তালাক দেওয়ার পরও জুবায়ের তার মা ও বোনকে নিয়ে গোড়াইয়ের বাসায় থাকত। কিন্তু শাহিন মিয়া দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ওই বাসা থেকে বের করে দিতে চাইছিলেন। এ নিয়ে এলাকায় কয়েক দফায় বিচার-শালিশ হলেও কোনো সমাধান আসেনি। পরে রাস্তাঘাটে জুবায়েরকে দেখলেই মারধর, নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন ও বকাঝকা করতেন।

তারই ধারাবাহিকতায় গত (৩ নভেম্বর) সোমবার দিনেও বকাঝকা বা নির্যাতন করেন। বারবার বাবার কাছ থেকে এমন অপমান সহ্য করতে না পেরে বাসায় গিয়ে ফাঁস দেয় জুবায়ের। মায়ের ডাকচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যায়। দীর্ঘ এগারো দিন আইসিইউতে থাকার পর তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকার শিন-শিন জাপান হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে দীর্ঘ এক মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জুবায়ের।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল আনুমানিক ১২টার দিকে সে ইন্তেকাল করে এবং ঢাকা থেকে গোড়াই এলাকায় বিকাল ৫টার দিকে লাশ নিয়ে আসা হয়। এক মাসে তার বাবা চিকিৎসাবাবদ কোনো খরচ বহন করেননি বলেও জানিয়েছেন তার মা।

ছেলে জুবায়েরের শোকে তার মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। কারণ তার একমাত্র ছেলে জুবায়ের। তাকে শেষবার দেখতে আসছেন অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব। তার এমন অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকে ছায়া নেমে এসেছে।

এই ঘটনায় জুবায়ের হোসেনের মা নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মির্জাপুর থানার এসআই কবির হোসেন বলেন, “ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”