মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৪ বছরেও চালু হয়নি বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র

রংপুর  প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০২ পিএম
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
expand
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র

উনি বিংশ শতাব্দীর মহিয়সী নারী, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। জন্ম রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে, ১৯৩২ সালের আজকের এই দিনে কলকাতায় হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। পরে সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের জন্মভিটা পায়রাবন্দ গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাস্তুভিটার প্রধান ফটক পার হলেই দেখা মিলে কয়েকটি ভবন। আর একটু এগোলে চোখে পড়বে আঁতুড়ঘর। যে আঁতুড়ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত, প্রাবন্ধিক, বাঙালি চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয় দেশব্যাপী। বিভিন্ন অবদানের জন্য সম্মানিত করা হয় নারীদের। এবারও নানা আয়োজনে বেগম রোকেয়া দিবস পালন করছে সরকার।

শুধু ৯ ডিসেম্বর আসলেই বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা স্মৃতি কেন্দ্রে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে বাংলা একাডেমি। কিন্তু স্মৃতি কেন্দ্র কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় চরম উদ্যোগে রংপুরের মানুষ।

পায়রাবন্দে তার নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত ডিগ্রি কলেজ জাতীয়করণ ও একটি ১০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো হলেও রংপুরবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি নির্মাণের ২৪ বছরেও চালু করতে পারেনি সরকার। এ নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় মানুষের মাঝে। এলাকাবাসীর দাবি, বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি দ্রুত চালু করা হোক।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে পায়রাবন্দের একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জহির উদ্দিন সাবের চৌধুরী ছিলেন একজন জমিদার। ওই পরিবারে নারী শিক্ষা ছিল একেবারে নিষিদ্ধ। কিন্তু রোকেয়া ভাইয়ের সহযোগিতায় অতি গোপনে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৯৮ সালে ১৬ বছর বয়সে ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

১৯০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর ভাগলপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন, যা পরবর্তীতে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয় এবং বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল নামে পরিচিতি লাভ করে। তার জীবন ও কাজ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে নারীবাদের ইতিহাসে একটি প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে রয়ে গেছে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা সাহিত্যে মুসলিম নারীদের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে : সুলতানার স্বপ্ন, অবরোধবাসিনী, পদ্মরাগ। তিনি নারী শিক্ষার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পায়রাবন্দে ৩ একর ১৫ শতক জমির ওপর নির্মাণ হয়েছে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। ২০০১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার পর ২৪ বছরেও এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে এটি। যদিও এটাকে শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম পাদপীঠ হিসাবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে মূল কার্যক্রম চালু হয়নি।

পায়রাবন্দ স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ৯ ডিসেম্বর আসলেই বিভিন্ন আয়োজন দেখা যায়, শুধু অবকাঠামো দিয়ে কী হবে? বেগম রোকেয়ার জন্মভূমিতে প্রতিষ্ঠিত স্মৃতি কেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় লজ্জাবোধ করছি। স্মৃতিকেন্দ্রের উপ-পরিচালক আবিদ করীম মুন্না বলেন, স্মৃতিকেন্দ্রের কার্যক্রম কবে চালু হবে জানি না।

রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) শরিফুল ইসলাম বলেন, দিবসটি উপলক্ষ্যে ৩ দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা বেগম রোকেয়ার উপর আলোচনা ও কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে।

১৯৪০ সালের এসএ রেকর্ড অনুযায়ী বেগম রোকেয়া পরিবারের ৫১ একর ৪৬ শতক সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। বেগম রোকেয়ার বৈমাত্রেয় ভাই মছিহুজ্জামান সাবেরের মেয়ে রনজিনা সাবের (৭২) বলেন, রোকেয়া দিবস এলেই শুধু সংবাদকর্মীরা তার খোঁজখবর নিতে বাড়ি যান। সারা বছর আর খবর রাখেন না। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার যেটি আঁতুড়ঘর, সেখানের ৩০ শতাংশ জমি আমাদের (রনজিনা) পৈতৃক সম্পত্তি। কিন্তু প্রশাসন সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এটা তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না।

তিনি বলেন, সরকার এটা অধিগ্রহণ করুক, অন্যথায় পরিবারকে ফেরত দিক। বেগম রোকেয়ার নামে ফাউন্ডেশন করার দাবি করে আসছেন রনজিনা। কিন্তু কাজ হয়নি। রনজিনা সাবের বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সালে অবসরে যান। বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে ছেলের একটা চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই হয়নি। রোকেয়ার স্বজন যদি রোকেয়া ভার্সিটিতে চাকরি না পায়, তাহলে বেগম রোকেয়ার নাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুছে ফেলা হোক।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X