

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম নৈরাজ্য ও বেহাল দশা ফুটে উঠেছে। একদিকে ভূমিকম্পের আতঙ্কের মধ্যে পরিত্যক্ত ও হেলে পড়া ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, অন্যদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা হলের গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই।
ঘটনাটি উপজেলার উত্তর পশ্চিম চর জাঙ্গিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, যা বর্তমানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এক ‘মৃত্যুফাঁদ’-এ পরিণত হয়েছে।
বিদ্যালয়টির দোতলা ভবনটি পরিত্যক্ত এবং পশ্চিম দিকে হেলে পড়া। ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও, নিচতলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা।
এনপিবি এর এক প্রশ্নের জবাবে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেহানা জামান বলেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট রয়েছে। তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে বহুবার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও কক্ষ সংকটের বিষয়ে অবহিত করেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নতুন কক্ষের ব্যবস্থা না করেই কেবল ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দায় সেরেছে। বাধ্য হয়েই ঝুঁকি জেনেও তিনি সেখানে পরীক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষিকাসহ মোট ৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন সহকারী শিক্ষকই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। ফলে শিক্ষক সংকটে পরীক্ষার হলে গার্ড বা পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন এসএসসি (স্কুল ম্যানেজিং কমিটি) কমিটির সদস্য এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষা চলাকালীন অভিভাবকরা শুধু পাহারাই দিচ্ছেন না, বরং নিজ সন্তানদের প্রশ্নের উত্তরও বলে দিচ্ছেন। এতে পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা সুলতানা ও জেসমিন আক্তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "অভিভাবকদের দিয়ে গার্ড দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না, যা শিক্ষার মানের জন্য হুমকিস্বরূপ।
কর্মবিরতিতে থাকা সহকারী শিক্ষকরা (মু. জহিরুল ইসলাম, আলী হোসেন, ইসরাত জাহান, জেসমিন আক্তার, মাহমুদা সুলতানা এবং আবদুল্লাহ আল ফারুক) জানান, তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে অধিদপ্তর জোরপূর্বক পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
সহকারী শিক্ষক মু. জহিরুল ইসলাম বলেন, "প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।" আরেক শিক্ষক আবদুল্লাহ আল ফারুক প্রশ্ন রাখেন, "পরীক্ষা ৫ দিন পরে নিলে ক্ষতি কী হতো? একদিকে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন, অন্যদিকে অধিদপ্তর প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা নিতে বাধ্য করছে—যা মোটেও কাম্য নয়।"
চরম হতাশা প্রকাশ করে প্রধান শিক্ষিকা রেহানা জামান বলেন, আমি আছি উভয় সংকটে, ‘পাটা পুতার ঘর্ষণে মরিচের জীবন শেষ’।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরীক্ষা ও অভিভাবক দিয়ে গার্ড দেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে, এনপিবি কে, কমলনগর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এটিও) মু. টিপু সুলতান বলেন, আসলে আমরা সিস্টেমের মধ্যে আটকে গিয়েছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান শিক্ষকদের পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস না নেওয়ার নোটিশ আগেই দেওয়া হয়েছে। কক্ষ সংকট থাকলে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ ব্যবহার করা উচিত ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মন্তব্য করুন
