মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক ডিলা‌রের সার আটক, অন্য ডিলা‌রকে জ‌রিমানা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম
কুড়িগ্রামে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
expand
কুড়িগ্রামে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী‌তে পাচারকৃত সার আট‌কের ঘটনায় তুঘল‌কি কাণ্ড শুরু হ‌য়ে‌ছে। অভি‌যোগ, এক ডিলা‌রের সার আটক করা হ‌লেও জ‌রিমানা করা হয় অন‌্য ডিলা‌রের।

স্থানীয়‌দের দা‌বি, কারসা‌জির মাধ‌্যমে এ ঘটনা ঘ‌টি‌য়ে‌ছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন। এ ঘটনায় উপ‌জেলাজু‌ড়ে তোলপাড় শুরু হ‌য়ে‌ছে।

জানা গে‌ছে, গত শুক্রবার রাতে উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের মাস্টারমোড় এলাকায় বিএডিসির অনুমোদিত মেসার্স রাদিয়া ট্রেডার্সের গোডাউন থেকে দুটি নসিমনে ক‌রে ৮০ বস্তা সার আটক ক‌রে স্থানীয়রা। প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে সার ছিল।

মেসার্স রা‌দিয়া ট্রেডার্স ওই ইউনিয়‌নের সাপখাওয়া ও ব্যাপারীটারী এলাকার অনুমোদিত ডিলার মোছা. হালিমা খাতুন।

স্থানীয় কৃষক‌রা জানান, এর আগেও রাদিয়া ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে এবং প্রতিষ্ঠানটি জরিমানা মুখে পড়ে।

সূত্র জানায়, রাদিয়া ট্রেডার্স ও ইশা ট্রেডার্স এর মালিক মনসুর আলী। যি‌নি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্টেনোগ্রাফার প‌দে চাকরি করেন। রাদিয়া ট্রেডার্স স্ত্রীর নামে এবং ইশা ট্রেডার্স স্ত্রীর ভাইয়ের (শ‌্যাল‌ক) নামে। পৃথক পৃথক নাম হ‌লে দু‌টি ব‌্যবসা প‌রিচালনা ক‌রেন তি‌নি।

খোঁজ নি‌য়ে জানা গে‌ছে, স্থানীয় বাসিন্দারা সারগু‌লো জব্দ করার পর পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে যান নাগেশ্বরী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ নাদিম।

এস আই না‌দিম বলেন, স্থানীয়দের খবর পেয়ে নসিমনসহ সার জব্দ করা হয়। ওই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা সেগুলো রাদিয়া ট্রেডার্সের সার বলে দাবি করেছিল। আমরাও জিডিতে সেটি উল্লেখ করেছি।

এ ঘটনার পর নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বদরুজ্জামান রিশাদ গত রোববার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। সেখা‌নে ইশা ট্রেডার্স‌কে ৫০ হাজার টাকা জ‌রিমানা করা হয়। তবে জব্দ হওয়া সারগু‌লো রাদিয়া ট্রেডার্সের গোডাউন থেকেই উদ্ধার হলেও জরিমানা করা হয় ইশা ট্রেডার্সকে।

এ বিষয়ে নাগেশ্বরী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বদরুজ্জামান রিশাদ বলেন, ‘আমি মোবাইল কোর্টে যার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পেয়েছি, আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ সঠিক কি না বা কারচুপি আছে কি না এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ বা প্রসিকিউশন দাতা অফিসারই বলতে পারবেন।’

ত‌বে মামলার প্রসিকিউশন দাতা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন ব‌লেন, রাদিয়া ট্রেডার্স ও ইশা ট্রেডার্সের মালিক একজনই (মনসুর আলী)। রাদিয়া ট্রেডার্স তার স্ত্রীর নামে এবং ইশা ট্রেডার্স স্ত্রীর ভাইয়ের (শ‌্যালক) নামে। তারা পরস্পরের আত্নীয় এবং একই গোডাউনের পার্টিশনের দুইদিকে দুইজনের সার রাখেন। এজন্য স্থানীয় জনগণ জব্দকৃত সার রাদিয়া ট্রেডার্সের মনে করেছিল। কিন্তু আমরা সরেজমিনে গিয়ে ডিসেম্বর মাসের সার উত্তোলনের খাতাপত্র যাচাই-বাচাই করে দেখেছি রাদিয়া ট্রেডার্স এই মাসে এখনো কোনো সার উত্তোলন করেননি।

অন্যদিকে ইশা ট্রেডার্স যে পরিমাণ সার উত্তোলন করেছে এবং গোডাউনে যতোগুলো বস্তা আছে তার সাথে জব্দকৃত ওই ৮০ বস্তার হিসাবের মিল রয়েছে। এ ছাড়াও ইশা ট্রেডার্সের মালিক রবিউল ইসলাম এসব সার তার বলে স্বীকার করেছেন।

এর আগে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ইশা ট্রেডার্স ও রাদিয়া ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার করে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর শুক্রবার রাতে জব্দকৃত সারের অভিযোগের প্রেক্ষিত আবারও ৭ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত ইশা ট্রেডার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। জব্দ করা সার সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয় ব‌লে জানা গে‌ছে।

কু‌ড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'ইশা ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুপারিশ করেছেন। আমরা যাচাই বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।'

তিনি আরও জানান, বিএডিসির সার পাচারের অভিযোগে কৃষি উপদেষ্টা তাকে ফোন করেছেন এবং তাকে শোকজ করা হয়।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X