মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মা-নানার ইন্ধনে বাবার মাথা ফাটিয়ে দিল ছেলে

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৬ পিএম
হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন বাবা
expand
হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন বাবা

মা ও মায়ের মামার ইন্ধনে বাবার মাথা লাঠি দিয়ে ফাটিয়ে দিয়েছে এক কিশোর। আর কিশোরকে সহযোগিতা করেছেন তার মা। ছেলের লাঠির আঘাতে আহত হয়ে এখন উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই বাবা। বেডে শুয়ে কাঁদছেন তিনি। স্ত্রী এ সন্তানের এমন হীন কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর বারোটার দিকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের মধ্য তারাপুর গ্রামে। আহত ওই বাবার নাম সংগ্রাম সাহা (৪৫)। যিনি পৌরসভার মীরগঞ্জ বাজারের মৃত অনীল চন্দ্র সাহার ছেলে।

জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই সহজ সরলভাবে বেড়ে ওঠা সংগ্রাম সাহার শৈশব ও কৈশোর কাটে মীরগঞ্জ বাজারে। প্রায় কুড়ি বছর আগে বিয়ে করেন মধ্য তারাপুরের খগেন হালাইয়ের মেয়ে রতনাকে। পরে ৪ ভাইয়ের একই বাড়িতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ওই বাড়ির অংশ বড় নারায়ণ চন্দ্র সাহার নিকট করেন সংগ্রাম। স্ত্রী রতনাসহ চলে যান শ্বশুর বাড়িতে। জমি বিক্রির ওই টাকায় মামা শ্বশুর চন্দনের নিকট থেকে কেনা জমিতে বাড়ি করেন তিনি। প্রায় দেড়যুগ ধরে ওই কেনা জমিতে বসবাস করে আসলেও দলিল তো দূরের কথা, শেষ অবধি টাকাটাও ফেরত দেননি চন্দন।

এর আগে, এলাকায় কায়িক শ্রমের চাহিদা না থাকায় পেট বাঁচাতে মেয়ে শ্রাবণী ও ছেলে শ্রাবণকে নানীর কাছে রেখে স্ত্রী রতনাকে নিয়ে ঢাকায় যান সংগ্রাম। নিজে রাজমিস্ত্রী এবং স্ত্রী কাজ নেন গার্মেন্টসে। এবার বদলে যেতে থাকেন রতনা। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু স্ত্রী রতনা ফেরাতে না পেরে বছরখানেক পর বাড়িতে ফেরেন সংগ্রাম।

সংগ্রামের ভাষ্য, বাড়িতে ফেরার পর মাঝেমধ্যে ঢাকায় যেতে চাইলেও ফোনে বারণ করত স্ত্রী। পরে ঢাকায় গিয়ে জানতে পারি, আমার দূরসম্পর্কের এক মামা শ্বশুরকে নিয়ে একই ঘর ভাড়া নিয়ে ঢাকায় বাস করে রতনা। সংসার করতে চায় না আমার। পরে ফিরে আসি।

কিন্তু কয়েকদিন আগে রতনা বাড়িতে এসে আমার সাথে সংসার করবে না বলে গালাগাল করতে থাকে। শেষে, রোববার দুপুর বেলা আমার মামা শ্বশুরের ইঙ্গিতে বউ আর বেটা মিলে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না আমাকে। পরে পুলিশ এসে আমাকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর আমার বউ আমাকে ধরে ফেলে। আর ছেলে শ্রাবণ এসে মাথায় ইউক্যালিপটাসের মোটা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এটা যে কত বড় অপমান, সেটা আর কী বলব, দাদা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, সংগ্রামের এ দুঃখ গাঁথা কম-বেশি জানা সবার। কোনকিছু বলার আগেই সংগ্রামের ওই কথাগুলোই যেন হর হর করে বলে দিচ্ছে সবাই।

তারা বলেন, বাড়ির জায়গাটুকুর জন্য টাকা দিলেও আজও সেই জমির দলিল করে দেননি সংগ্রামের মামা শ্বশুর চন্দন। আর সংগ্রামের সংসার করবে না বলে রতনা ও তার ছেলে লাঠি দিয়ে মেরে সংগ্রামের মাথাটা ফাটিয়ে দিল সবার সামনে।

পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পাঠাই। ঘরে থাকার জন্য টং (চৌকি) ভেঙে দিয়েছে রতনা। ওর কাপড়চোপড়ও পুড়িয়ে দিয়েছে।

বিষয়টি জানতে সংগ্রামের বাড়িতে গেলেও বাড়ি তালাবদ্ধ থাকায় তার স্ত্রী রতনা ও ছেলে শ্রাবণের দেখা যায়নি।

তবে জমির জন্য টাকা নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে রতনার মামা চন্দন বলেন, আমি বিষয়টি মিমাংসার জন্য চেষ্টা করছি। এদিকে বিষয়টি মিমাংসার জন্য বসার কথা আছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X