শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টেকনাফে পরকীয়ার অভিযোগে নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ পিএম
টেকনাফে পরকীয়ার অভিযোগে নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন
expand
টেকনাফে পরকীয়ার অভিযোগে নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় পরকীয়ার অভিযোগ তুলে এক নারীকে প্রকাশ্যে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। তার হাত মোটা রশি দিয়ে বাঁধা, রশিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।

ঘটনাটির একটি ভিডিও মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

দেড় মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়- এক নারী মাটিতে লুটিয়ে আছেন, চারপাশে কয়েকজন যুবক তাকে লাঠি ও বেত দিয়ে আঘাত করছে। এক পর্যায়ে তাদের একজন চিৎকার করে বলে উঠছে, রাতের বেলায় আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ছে। ওই সময় উপস্থিত আরও কয়েকজন যুবক উল্লাসধ্বনি দেয়। একই ভিডিওতে আরেকজন যুবককেও মারধরের দৃশ্য ধরা পড়ে, যাকে 'পরকীয়া প্রেমিক' বলে দাবি করছে নির্যাতনকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বর্তমানে বিদেশে প্রবাসী। অভিযোগ উঠেছে, তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু যুবক নারীকে জোর করে ঘর থেকে বের করে এনে এভাবে নির্যাতন চালায়।

ভিডিওতে উল্লেখ রয়েছে ঘটনাস্থল টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকা। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোন পাড়া বা ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই ঘটনাটিকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা আখ্যা দিয়ে লিখেছেন- ‘অভিযোগ থাকলে আদালত আছে, কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে নারীকে নির্যাতন করার অধিকার কারও নেই।’

কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবী শিপ্ত বড়ুয়া বলেন, 'কেউ অপরাধ করেছে বলে ধরে নিলেও নিজ হাতে শাস্তি দেওয়া আইনবিরোধী কাজ। এটি নিজেরাই আরেকটি অপরাধ করে বসেছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ফৌজদারি অপরাধ।'

বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর দূর্জয় বিশ্বাস বলেন, 'এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে ভিডিওটি আমরা দেখেছি। অভিযোগ পেলে বা প্রমাণ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এদিকে, মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন- এ ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়া সমাজে ভয়াবহ বার্তা দেয়। অপরাধী যেই হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত ভিডিওতে যাদের মুখ স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই 'সামাজিক বিচারের নামে' নারী নির্যাতনের সংস্কৃতি চলে আসছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এমন নৃশংসতা প্রায়ই গোপনে ঘটে যাচ্ছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন