

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


২০২৫-২৬ আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহি চিনিকল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানীতে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চিনিকলের কেইন কেরিয়ারে আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের মাড়াই মওসুম উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। কেরু চিনিকল কতৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে বড় চিনিকল দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানী। চিনি উৎপাদন কারখানা, ডিষ্টিলারী, জৈব সার কারখানা,বানিজ্যিক-পরীক্ষামুলক খামার ও ওষুধ কারাখানার সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ এ শিল্প কমপ্লেক্সের চিনি কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহতভাবে লোকসান গুনে আসছে। সরকারিভাবে চিনির মুল্য বৃদ্ধির কারণে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে চিনিকারখানাটি।
প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিলস হাউজে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করে চিনিকলটি আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এতে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়বে। তবে এলাকায় আখ চাষ ক্রমাগত কমতে থাকায় সংকটে পড়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহি এই চিনিকলটি।
চলতি মওসুমে ৭৬ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২’শ ৫৬ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। চিনি আহরনের হার ধরা হয়েছে ৫ দমমিক ৬০ ভাগ। প্রতিদিন গড়ে ১১’শ ৫০ টন আখ মাড়াই করবে চিনিকলটি। ৭০ থেকে ৭৫ দিন চালু থাকবে। দন্ডায়মান আখ রয়েছে ৫ হাজার ৫’শ ৬২ একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১৬’শ ২৫ একর এবং চাষীর ৩ হাজার ৯’শ ৩৭ একর জমিতে।
চাষীদের দাবীর প্রেক্ষিতে এ মওসুমে আখের মুল্য বাড়িয়েছে সরকার। এবার প্রতিমন (৪০ কেজি) আখের মুল্য ২৫০ টাকা টাকা করা হয়েছে। তবে চিনির মুল্য বাড়লেও আশানুরূপ হারে আখের মূল্য বাড়েনি। আখের মূল্য আরো বাড়ানোর দাবি চাষীদের।
কেরু এ্যান্ড কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাব্বিক হাসান বলেন, ‘মাড়াই মওসুম শুরু করতে চিনিকলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ মৌসুমে চিনি কারখানায় লোকসান কমিয়ে আনতে সবাই মিলে কাজ করছে। এবার চিনি উৎপাদনের পরিমানও বাড়বে।’
১৮০৫ সালে মি. জন ম্যাকসওয়েল নামক এক ইংরেজ তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় ভারতের কানপুরে জাগমু নামকস্থানে তখনকার একমাত্র ফরেন লিকার কারখানাটি চালু করেছিলেন। অতঃপর বিভিন্ন সময়ে এর নাম, স্থান, মালিকানা, উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হতে থাকে। ১৮৪৭ সালে মি. রবার্ট রাসেল কেরু অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হন এবং কালক্রমে তা ক্রয় করে নেন। উত্তর ভারতের ‘রোজা’তে অবস্থানকালীন ১৮৫৭ সনে সিপাহী বিপ্লবের সময় কারখানাটি ক্ষতি গ্রস্থ হয়। অতঃপর তা’ পুনঃনির্মাণপূর্বক জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানী গঠন করে ‘কেরু এ্যান্ড কোম্পানী লি. হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ করা হয়। ‘রোজা’তে ব্যবসা উন্নতি লাভ করলে আসানসোল ও কাটনীতে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ সনে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ১০০০ টন আখ মাড়াই ও ১৮ হাজার প্রæফ লিটার স্পিরিট তৈরির লক্ষ্যে আরও একটি শাখা তদানীন্তন নদীয়া জেলার অন্তর্গত এ দর্শনায় স্থাপন করা হয়। ১৯৬৮ সনে ইংরেজরা এ দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (পাকিস্তান) লি. এর স্থলে ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব ইপিআইডিসি’র উপর ন্যস্ত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকে অদ্যাবধি এটি কেরু এ্যান্ড কোম্পানী (বাংলাদেশ) লি. নামে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেরু এন্ড কোম্পানী বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছে সর্বোচ্চ ১৫০ কোটি টাকা। এ বছর মুনাফার পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ১৩০ কোটি।
মন্তব্য করুন
