

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেঁপে ওঠে দক্ষিণাঞ্চলও। তবে পরিমাপক যন্ত্র থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পের মাত্রা কত ছিল তা জানা যায়নি। কারণ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূ-কম্পন পরিমাপক যন্ত্র ‘সিসমোগ্রাফটি’ প্রায় ১৫ বছর ধরেই অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে।
২০০৮ সালের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ বিভাগ ও যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡বিদ ওউন ইয়াং কিম উদ্বোধন করেন সিসমোগ্রাফটি। তবে শুরু থেকেই হ্যান্ড টার্মিনাল ডিভাইস ও অপারেশনাল সমস্যায় যন্ত্রটি ঠিকমতো চালু হয়নি।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষণা প্রকল্পের তৎকালীন পরিচালক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আকতার যন্ত্রটি পরিদর্শন করে বিকল্প যন্ত্রাংশ বসিয়ে কার্যক্রম চালু করেন। এরপর মাত্র দুটি ভূমিকম্পের তথ্য রেকর্ড করা সম্ভব হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আবার সমস্যা দেখা দিলে ইন্টারনেট সংযোগসহ পুরো সিস্টেম নতুনভাবে চালু করা হয়। তবে এক বছরের মধ্যে আবার নষ্ট হয়ে যায় যন্ত্রটি। তারপর থেকে আর সচল হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্প ঝুঁকি বাড়লেও একমাত্র গবেষণাউপযোগী সিসমোগ্রাফটি এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের আগে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ওয়েভ দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে, আর সার্ফেস ও রিলে ওয়েভ আসে কিছুটা পরে। ঠিকমতো কাজ করলে সিসমোগ্রাফ এসব ওয়েভের সংকেত পেয়ে এক থেকে দুই মিনিট আগেই সতর্কবার্তা দিতে পারে। এছাড়া যন্ত্রটির মাটির নিচে থাকা বিশেষ অংশ (প্লেট)। এ প্লেট ভূমির উচ্চতানিম্নতার পরিবর্তনও পর্যবেক্ষণ করে দক্ষিণাঞ্চলের ভূতাত্তি¡ক ঝুঁকি বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
পবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামসুজ্জোহা বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র। বড় ভূমিকম্প বা সুনামির আগে অনেক সময় ছোট ছোট কম্পন ঘটে। এসব ডেটা বিশ্লেষণ করলে ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়া সম্ভব। তবে ভূমিকম্পের নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয়নি।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিসমোগ্রাফটির প্রায় সব যন্ত্রাংশই অকার্যকর হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে জানিয়েছি। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক প্রয়োজনেও একটি নতুন সিসমোগ্রাফ দরকার। পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ থেকে নতুন প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’
মন্তব্য করুন