শনিবার
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কালের স্রোতে মুছে যাচ্ছে নবান্ন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম
ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষকরা
expand
ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষকরা

আজকের প্রজন্ম নবান্নকে চেনে শুধু গল্পে, সিনেমায় বা পাঠ্যবইয়ের পাতায়। মাঠে নতুন ধান ওঠে ঠিকই, তবে নেই আগের সেই প্রাণচাঞ্চল্য বা অপেক্ষার উত্তেজনা। আধুনিকতার ছোঁয়া, ব্যস্ত জীবনের চাপ আর ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যার কারণে নবান্নের উৎসব এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে।

আগে অগ্রহায়ণ এলেই গ্রামবাংলা জুড়ে পিঠা–পায়েসের ঘ্রাণ, আত্মীয়-স্বজনের সমাগম আর নতুন ধানের ভাত রান্নার ধুম পড়ে যেত। এখন সেসব যেন শুধু স্মৃতির পাতায়।

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা—সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম—এ এখন আমন ধান কাটার ব্যস্ততা চূড়ান্ত পর্যায়ে। হেমন্ত শেষে শীতের আগমনী ছোঁয়ায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে দুলছে সোনালি ধান। কৃষকের ক্লান্ত চোখে ফুটে উঠছে নতুন ধানের ঘ্রাণে খুশির হাসি। ধান ঘরে তুলতে তুলতে ফিরে আসছে আশার আলো, কিন্তু উৎসবের উচ্ছ্বাস নেই আগের মতো।

হাতীবান্ধার ৮৬ বছর বয়সী কৃষক আজিজার রহমান বলেন, পাকিস্তান পিয়টে অভাব ছিল, কিন্তু নতুন ধান কাটার আনন্দ ছিল ভরপুর। ধান ঘরে তোলার পর পিঠা-পোলাও বানাতাম, হুজুরকে ডাকতাম, সবাই মিলে খেতাম। এখন আর সেই আনন্দ নেই। আবাদ বাড়ছে, কিন্তু আনন্দ কমছে। এখনকার বাচ্চারা নবান্ন মানেই না। তাই গ্রামের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

নতুন ধানে ভাত রান্না আর হয় না”৬৫ বছর বয়সী কৃষক মজিবার রহমান বলেন, আগে নতুন ধান আনতাম, চাউল বানিয়ে ভাত রান্না করতাম। প্রথম ভাত হুজুরকে খাওয়াতাম, পরে নিজেরা খেতাম। দোয়া খায়ের করতাম। এখন এসব আর হয় না। অনেকেই বলে এই আয়োজন নাকি ‘বেদাত’। তাই নবান্ন আর পালন হয় না। কালই ধান কাটলাম, শুকিয়ে আজই খাওয়া শুরু সেই নিয়ম-রেওয়াজ আর নাই, আমাদের মাঝে নাই। মানুষ মানুষকে মানে না ।

অতীতের স্মৃতি মনে করে আমিনা বেগম বলেন, আগে মানুষ ঐতিহ্যকে মানত, পরস্পরকে দাম দিত। এখন কেউ কাউকে মানে না। নতুন চালের ভাত রাধতাম, মাছারের দুয়ারে রাখতাম, মোলবি ডাকতাম, মিলাদ পড়াতাম। এখন এসব নেই। মানুষের ভিতর ঈমান-আচরণ কমে গেছে। সময় বদলাইছে, ঐতিহ্যও হারাই যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রামের মাঠে সোনালি ধান হাওয়ায় দুললেও নবান্নের উৎসব আজ শুধুই স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের ঘরে ধান ঢুকছে, কিন্তু উৎসবের উচ্ছ্বাস আর আগের মতো নেই। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির শেকড়ের এই চিরন্তন ঐতিহ্য।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন