

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার লাইসেন্স শাখায় সকাল গড়িয়ে গেলেও দেখা মিলছে না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর। মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর ২০২৫) বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত শাখাটি সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সমস্যা শুধু নির্দিষ্ট দিনেই নয়; সাধারণত সকাল ৯টায় অফিস খোলার কথা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমিত রায় ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রানী প্রায়শই ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে অফিসে পৌঁছান। ফলে সেবা নিতে আসা নাগরিকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হন।
সরেজমিন দেখা যায়, পৌর ভবনের ১০৪ নম্বর কক্ষের দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন না। ফলে সেবা নিতে আসা সাধারণ নাগরিকদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়।
শুধু অনুপস্থিতিই নয়—লাইসেন্স শাখায় অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায় এবং সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগও উঠেছে। সাক্ষ্য, অনুসন্ধান ও একাধিক ভুক্তভোগীর বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে নানা অব্যবস্থাপনা ও হয়রানির চিত্র।
রায়পুর পৌর এলাকার মহিলা কাপড় ব্যবসায়ী রুমা আক্তার অভিযোগ করেন, তাঁর ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সরকারি ফি ছিল ১,১৭৫ টাকা, কিন্তু তাঁর কাছ থেকে ২,০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি গর্ভবতী অবস্থায় পৌরসভায় গিয়েছিলাম। সারাদিন ঘুরেছি, কেউ বসতেও বলেনি। বরং উল্টোভাবে কথা বলেছেন।
রুমা আক্তারের দাবি, পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা রীনা রানী রায় তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তিনি বলেন, আমি শরীর খারাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কেউ একটা চেয়ারও দেয়নি। উনি মজা করে বলেন, ‘উনার মাথায় উকুন আছে কিনা দেখেন।’ অপমান এড়াতে চুপ করে মাথা দেখে দিয়েছিলাম।
এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন রুমা আক্তার। তাঁর ভাষায়, “আমি সেবা নিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু আচরণে মনে হয়েছে যেন আমি কোনো অপরাধী।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন বলেন, সকাল ১০টা থেকে পৌরসভায় বসে ছিলাম, কিন্তু বেলা ১১টা ৪০ পর্যন্ত কেউ আসেনি। পরে অমিত রায় নামে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে আসছি।’ কিছুক্ষণ পর জানালেন কম্পিউটার নষ্ট, কাজ হবে না। কিন্তু পরে দেখা যায়, সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে।
রায়পুর বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, ৩ নভেম্বর আমি ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য গেলে অমিত রায় অত্যন্ত রূঢ় ও অসম্মানজনক আচরণ করেন—যা একজন সরকারি কর্মকর্তার মানসই নয়।
একইভাবে বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শাহ আলম খান অভিযোগ করে বলেন, আমার ট্রেড লাইসেন্সের বিবরণীতে লেখা ছিল ৩,৫০০ টাকা, কিন্তু আমার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৪,৫০০ টাকা। অতিরিক্ত টাকা কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে তারা উল্টো বলেন, ‘অনেক কম নিয়েছি।
সেবাপ্রার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার লাইসেন্স শাখায় দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে। শাখাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমিত রায় এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা রীনা রানী রায় ফুফু-ভাতিজা সম্পর্কের। স্থানীয়দের দাবি, এই পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার কারণে অফিসের কার্যক্রমে জবাবদিহিতার অভাব ও প্রভাব খাটানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক অমিত রায় বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত, কারণ পরিবারের কিছু সদস্য অসুস্থ। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে—পিছনে কিছু মানুষ লাগানো হয়েছে। আমি এই অবস্থায় এখানে থাকতে চাই না। কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে অন্যত্র বদলি করে, আমি তাতেই স্বস্তি পাব। আমি সবসময় পৌরসভার উন্নয়ন ও সেবার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
অন্যদিকে, পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা রীনা রানী রায় বলেন,আমি কোনো অনিয়ম করিনি। অনেকেই এখানে সেবা নিতে আসেন—আপনি ঠিক কাকে বলছেন তা বুঝতে পারছি না। মনে পড়ছে, একদিন আমার মাথায় আঘাত লেগেছিল, তখন আশপাশে কোনো নারী ছিল না। তাই উপস্থিত এক মহিলাকে বলেছিলাম আমার মাথাটা দেখে দিতে। বিষয়টি নিয়ে কেউ ভুল বুঝে থাকলে দুঃখিত। আমি রায়পুরের মেয়ে, প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়পুর পৌরপ্রশাসক (ইউএনও) মেহেদী হাসান কাউছার বলেন,আমি বর্তমানে প্রশিক্ষণে আছি। ফিরে এসে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। আমার পৌরসভায় কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি চলবে না। যিনি বা যারা অনিয়মে জড়িত থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন