

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপসী রাবেয়ার বিরুদ্ধে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের নামে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাছ বিক্রেতা ও ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকেও এই অর্থ আদায় করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপনের কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর, বাজার কমিটি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোথাও মৌখিক চাপ, কোথাও তালিকা তৈরি করে প্রকাশ্যেই চাঁদা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রোববার আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীরবাজারে ইউপি সদস্য মুসা মেম্বার ও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মিয়ার নেতৃত্বে বিজয় দিবসের আমন্ত্রণ কার্ড দেখিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। দোকানদারদের আপত্তির মুখে বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে পরে ইউএনওর নির্দেশে আদায়কৃত টাকা ফেরত দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
গাজীরবাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মিয়া বলেন, ইউএনওর কার্যালয়ের অফিস সহকারী কামাল হোসেন ফোন করে বিজয় দিবস উদযাপনের খরচের কথা বলে টাকা তোলার নির্দেশ দেন। পরে ইউএনওর অফিস থেকে আমন্ত্রণ কার্ড পাঠানো হলে দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
এদিকে সোমবার সকালে পৌর শহরের সড়ক বাজারে সাবেক কাউন্সিলর ও কাপড় ব্যবসায়ী আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে দোকানে দোকানে চাঁদা আদায় করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আতিকুর রহমান বলেন, রোববার ইউএনও আমাদের ডেকে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে বলেন। এরপর ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। সে কারণেই আমরা টাকা তুলছি।
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আয়েত আলী বলেন, ইউএনওর কার্যালয়ের কামাল হোসেনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের জন্য তার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। তিনি ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
উত্তর ইউনিয়নের ইটভাটা মালিক ইকবাল হোসেন জানান, প্রতিটি ইটভাটা থেকে ৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি দপ্তরের কর্মচারী বলেন, তাঁদের দপ্তর থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা ধার্য করা হয়েছিল। পরে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
চাঁদা আদায়ের তালিকায় আখাউড়া পৌরসভাও ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পৌরসভার হিসাবরক্ষক মো. হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বলেন, বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য পৌরসভা থেকে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ইউএনওই পৌরসভার প্রশাসক হওয়ায় তাঁদের কিছু করার ছিল না।
ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী কামাল হোসেন বলেন, বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য চাঁদা তোলার নির্দেশ ইউএনও দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ীই তিনি কাজ করেছেন।
চাঁদা তোলার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি তাপসী রাবেয়া বলেন, সরকারি বরাদ্দ খুবই কম। বিজয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হয়। সে জন্য স্থানীয়দের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে কাউকে জোর করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চাঁদা তোলার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে ইউএনও যদি এমন কিছু করে থাকেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।
মন্তব্য করুন
