

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ শেষ না করেই পুরো অর্থ উত্তোলন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে অডিটরিয়াম ভবনটি একটি পরিত্যক্ত কঙ্কাল ভবনে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নাজিরপুর উপজেলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিমরান মায়ান ট্রেড এন্টারপ্রাইজ ও এম এম টি আই (জেভি)। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্পের সঙ্গে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী শাহীন জড়িত ছিলেন। তিনি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটি একটি জলাশয়ের মাঝখানে নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ কাজে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নকশা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় রড ব্যবহার না করে কম পরিমাণ রড দিয়ে পাইল স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভবনের পশ্চিম পাশ ইতোমধ্যে হেলে পড়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
অডিটরিয়াম নির্মাণের আগে জলাশয়ের চারপাশে থাকা শতাধিক মূল্যবান মেহগনি গাছ টেন্ডার ছাড়াই কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সেই গাছ দিয়েই ভবনের ২৪টি দরজার ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে ভবনে দৃশ্যমান।
অভিযোগ রয়েছে, কাজ শুরুর পরপরই এলজিইডি পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও তৎকালীন নাজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন মিয়ার যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই প্রায় ১০ কোটি টাকা উত্তোলন করে নেয়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, উত্তোলিত অর্থ ভাগাভাগি করা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের পর থেকেই ঠিকাদার পলাতক রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নির্মাণাধীন অডিটরিয়াম ভবনটি বর্তমানে মাদকসেবী ও অসামাজিক কার্যকলাপের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহী। নাজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। মঠবাড়িয়া উপজেলার প্রকৌশলী মো. জিয়ারুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাকেও অফিসে পাওয়া যায়নি। জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজুর রহমানের সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ হলো এই দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এলজিইডি অফিসে স্থানীয় দুই সাংবাদিককে আটক ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, এতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন মিয়া ও নূরে আলম সিদ্দিকী শাহীন। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও পুলিশি হয়রানি চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাজিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কে এম সাঈদ বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ কর্মকর্তা তৎকালীন সরকারের দোসর ছিলেন। তারা সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। আগের মতোই দমনমূলক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া শাহানাজ তমা বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের যেসব প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে কাজ পুনরায় শুরু করে দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসন তৎপর থাকবে।
মন্তব্য করুন
