

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুল্লা গ্রামের বুল্লা আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, ভূয়া ভাউচার ও অর্থ আত্মসাৎসহ ১৮টি গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।এ যেনো দুর্নীতি–কেলেঙ্কারির এক মহাসাগর।
গত (১১ নভেম্বর) সকাল ১১:০০ টায় জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সরজমিনে এসে এডহক কমিটির উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক শুনানি করেন। এর আগে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসী জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগে উঠে এসেছে—দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি আসবাব বিক্রি, ভূয়া সনদে শিক্ষক নিয়োগ, রাজনৈতিক প্রচারণা, বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি গোপন এবং অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণসহ বহুবিধ অনিয়মের অজস্র প্রমাণ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার সময় রাজনৈতিক প্রভাবের আশ্রয়ে বিদ্যালয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের টেবিল, চেয়ার, ফ্যানসহ নানা সরঞ্জাম বিক্রি করেন। ২০২৩ সালে লাইব্রেরির জন্য দেড় লক্ষ টাকার বই কেনার দাবি করলেও বাস্তবে সেসব বইয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ভূয়া ভাউচারে বিক্রেতার স্বাক্ষরবিহীন বিল দেখিয়ে সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেন। ঠিকাদারের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকার বাথরুম নির্মাণ কাজে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি—বিদ্যালয়ের টিভি মেরামতের নাম করে নিজ বাসায় নিয়ে যান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,আ.লীগের সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী,ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩(সদর-বিজয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য র .আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন তিনি,তার প্রভাবেই সে বেপরোয়া হয়ে পরে।
বর্তমানে অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক রয়েছে।তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা রয়েছে।
অফিস সহকারী গোপাল চন্দ্র দাস এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। ২০২০ সালের পর বিদ্যালয়ের ভাউচার এবং হাজিরা রেজিস্টারের বেশিরভাগ ফাইল নিজের বাড়িতে নিয়ে যান প্রধান শিক্ষক। মাত্র ২০০৪–০৫ ও ২০২০–২১ সালের দুটি খাতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী জুবায়ের বলেন,লক্ষ লক্ষ টাকার ভাউচার অফিস থেকে গায়েব। প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, গরিব ছাত্রদের ৫ হাজার টাকা সহায়তা—কিছুই বাস্তবায়ন করেননি।প্রতিবাদ করায় আমাকে মামলার ভয় দেখিয়েছে।
অভিযোগকারী আব্দুল আহাদ আরও বলেন, ২০১৮ সালের দাড়িয়াপুর কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার নির্দেশে ভোট ছাপানো ও গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে—২০২৩ সালে বিদেশ ভ্রমণে অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত থেকে ৮ মাসের সরকারি বেতন নিজ পকেটে নেন তিনি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো.জুলফিকার হোসেন সরজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। তিনি জানান—লাইব্রেরির বই, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, কমন রুম মেরামতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন—তার বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত চলছে,যথাসময়ে সব জানানো হবে।
স্থানীয়দের দাবি—বুল্লা আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত শেষ করে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
মন্তব্য করুন