

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় “হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স”।
সর্বশেষ সূচকে ভারতের পাসপোর্টের অবস্থান নেমে এসেছে ৮৫তম স্থানে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ নিচে।
বিবিসি যোগাযোগ করলেও ভারত সরকার এখনো এই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ রুয়ান্ডা, ঘানা এবং আজারবাইজান। দেশগুলোর অবস্থান ভারতের ওপরে।
ফলে একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত ভারতের নাগরিকদের এখন অনেক দেশেই ভিসা পেতে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
একজন ভারতীয় ট্রাভেল ইনফ্লুয়েন্সার চলতি বছরের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করেছিলেন, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতীয়দের স্বাগত জানালেও ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোতে এখনও ভিসা পাওয়া কঠিন। তার সেই বক্তব্য যেন হেনলি সূচকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাস্তব রূপ পেয়েছে।
১৯৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৮৫তম, যেখানে রুয়ান্ডা, ঘানা ও আজারবাইজান যথাক্রমে ৭৮তম, ৭৪তম ও ৭২তম স্থানে আছে। ভারতের নাগরিকরা বর্তমানে ৫৭টি দেশে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারেন—সংখ্যায় তা আগের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও সামগ্রিক অবস্থানে উন্নতি হয়নি।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুর টানা দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষে রয়েছে, তাদের নাগরিকরা ১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের ভ্রমণনীতির প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ এবং বৈশ্বিক কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিবর্তন ভারতের অবস্থানকে প্রভাবিত করেছে। অনেক দেশ নিজস্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ভিসা নীতিতে কঠোরতা এনেছে।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রার মতে, একটি দেশের পাসপোর্ট শক্তি নির্ভর করে অর্থনৈতিক স্থিতি, রাজনৈতিক স্থায়িত্ব ও অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতার ওপর। তিনি বলেন, “১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক ইউরোপীয় দেশে সহজে ভ্রমণ করতে পারতেন। কিন্তু খালিস্তান আন্দোলনের পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের ভাবমূর্তি নড়বড়ে হয়।”
বিশ্বজুড়ে ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মালহোত্রা মনে করেন, কিছু ভারতীয়ের বিদেশে থেকে যাওয়া বা ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করা দেশের ভাবমূর্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। তাছাড়া পাসপোর্ট জালিয়াতি ও ধীর প্রশাসনিক প্রক্রিয়াও ভারতের পাসপোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
২০২৪ সালে দিল্লি পুলিশ ভিসা ও পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় ২০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। এই ধরনের ঘটনা অন্যান্য দেশের কাছে ভারতের পাসপোর্টকে কম বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিরাশাজনক নয়। সম্প্রতি ভারত ই-পাসপোর্ট চালু করেছে, যাতে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম একটি চিপ যুক্ত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি জালিয়াতি রোধে সহায়ক হবে এবং ভিসা যাচাই প্রক্রিয়াও দ্রুত হবে।
তাদের মতে, ভারতের পাসপোর্ট শক্তিশালী করতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা, বাণিজ্য ও শিক্ষা বিনিময় বাড়ানো এবং নতুন ভ্রমণচুক্তি স্বাক্ষর করা।
মন্তব্য করুন
