

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন সোমবার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে নিজস্ব সবুজ রঙের ট্রেনে করে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। কয়েক দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা বিদেশ সফরের জন্য এই বিশেষভাবে তৈরি সাঁজোয়া ট্রেন ব্যবহার করে আসছেন।
কেন এই ট্রেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার পুরোনো বিমান বহরের তুলনায় কিমের ট্রেন অনেক বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। এতে থাকে খাবারের ব্যবস্থা, বৈঠক ও আলোচনার জায়গা, নিরাপত্তা কর্মী, চিকিৎসক এবং সফরসঙ্গীদের জন্য আলাদা কামরা।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কিম এ ট্রেনেই চীন, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া সফর করেছেন।
ট্রেনের ভেতরের চিত্র
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ আন বিয়ং–মিনের তথ্য অনুযায়ী, একটি ট্রেনে সাধারণত ১০ থেকে ১৫টি কামরা থাকে। কিছু কামরা কেবল নেতার জন্য সংরক্ষিত—যেমন শয়নকক্ষ। অন্যগুলোতে থাকেন নিরাপত্তাকর্মী, চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
ট্রেনে কিমের অফিস, যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেস্তোরাঁ এবং সাঁজোয়া গাড়ি বহনের কামরাও থাকে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, কিম কাঠের প্যানেল দেওয়া কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে আছেন, পাশে উত্তর কোরিয়ার পতাকা এবং টেবিলে ল্যাপটপ, টেলিফোন ও অন্যান্য সামগ্রী রাখা।
আগের বছরগুলোর ফুটেজে দেখা গেছে, কখনো গোলাপি সোফা, কখনো ফুল আকৃতির আলো বা জেব্রা প্রিন্টের চেয়ার দিয়ে সাজানো কামরা ব্যবহার করেছেন তিনি।
সীমান্ত অতিক্রমের নিয়ম
রাশিয়া সফরের সময় ট্রেনের চাকা বদলাতে হয়েছিল, কারণ দুই দেশের রেলপথের মাপ আলাদা। তবে চীনের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবর্তন দরকার হয় না। সীমান্ত পেরোনোর পর চীনের ইঞ্জিন ট্রেনকে টেনে নিয়ে যায়, যাতে সেখানকার সংকেত ব্যবস্থা সহজে বোঝা যায়। ২০২৩ সালে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় চীনের বিশেষ সবুজ লোকোমোটিভ কিমের ট্রেন টেনেছিল।
চীনের রেলপথে ট্রেনটি ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে, আর উত্তর কোরিয়ার ভেতরে গতি সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।
কারা ব্যবহার করেছেন আগে
কিমের দাদা কিম ইল–সুং ও বাবা কিম জং–ইল নিয়মিত এই ট্রেন ব্যবহার করতেন। কথিত আছে, কিম জং–ইল বিমানে উঠতে ভয় পেতেন বলে সব বিদেশ সফরে ট্রেন ব্যবহার করতেন। ২০০১ সালে তিনি একবারে প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছিলেন।
২০১১ সালে এক ট্রেনযাত্রার সময়ই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। সেই কামরাটি এখনো তার সমাধিস্থলে প্রদর্শিত হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার প্রচারণায় দীর্ঘ ট্রেনযাত্রাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নেতা পরিবারের সাক্ষাতের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এক সফরকে বলেছিল—“দেশজুড়ে কষ্টসাধ্য ট্রেন ভ্রমণ”, যেখানে কিম মাঠে ভুট্টা পরিদর্শন করে ‘কমিউনিস্ট স্বপ্নরাজ্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন