

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


মাঠে কয়েকজন মানুষ কিছু খুঁজছেন। হঠাৎ দেখা যায়-ছোট একটি প্রাণীকে ধরা হচ্ছে, এরপর সেটি পরিষ্কার করে আগুনে পুড়িয়ে রান্না করা হচ্ছে। ভিডিওটি প্রথম দেখলে অনেকেরই মনে বিস্ময় বা অস্বস্তি জাগতে পারে। কিন্তু এই অনন্য রান্নার পেছনে রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্য, এক গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, আর এক তরুণীর সাহসী প্রচেষ্টা।
ভিডিওটির মূল চরিত্র ফিলিপাইনের এক তরুণী, যিনি নিজেকে “অ্যামবও গার্ল বলে পরিচয় দেন। ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে তিনি বলেন, এটাই আমাদের খাবার, এটাই আমাদের সংস্কৃতি। এরপর হাতে থাকা রোস্ট করা ইঁদুরের মাংস দেখিয়ে জানান, এটি তাদের সমাজে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রচলিত এক ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। তার মুখে কোনো সংকোচ নয় বরং ফুটে ওঠে গর্ব ও আত্মবিশ্বাস।
ভিডিওটি ভাইরাল হতেই অনলাইনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ তার সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ করেছেন কটাক্ষ। কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণও চালিয়েছেন, এমনকি তার চুল নিয়েও বিদ্রূপ করেছেন। কিন্তু রোসেল সুলিন-আই মাসালুন, যিনি অ্যামবও গার্ল নামেই বেশি পরিচিত, এসব সমালোচনায় ভেঙে পড়েননি। বরং তিনি বলেন, সমালোচনা আমাকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
তার ফেসবুক ভিডিও সিম্পলিং কিনাবুহি সা ত্রিবু (গোষ্ঠীর সহজ জীবন) ইতোমধ্যে দেড় মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে। সেখানে দেখা যায়, কীভাবে পরিবারের সদস্যরা মিলে ধানক্ষেতে ইঁদুর ধরে, আগুনে পুড়িয়ে রান্না করে, তারপর তা দিয়ে নানা পদ তৈরি করে।
রোসেল জানান, এটি তাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে চলে আসা এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-আমাদের বাবা-মা যেমন শিখিয়েছেন, আমরাও তেমনি আমাদের সন্তানদের শেখাচ্ছি।
বর্তমানে তার অনলাইন অনুসারীর সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। তার কনটেন্ট শুধু খাবার নয়, বরং তাদের গোটা আদিবাসী জীবনের প্রতিদিনের গল্প তুলে ধরে, জল আনা, রান্না করা, পাহাড়ে হাঁটা, গান গাওয়া, সবই যেন জীবন্ত সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
এই ব্যতিক্রমী জীবনধারা ফিলিপাইনের বুকিডন প্রদেশের লাঙ্গিলান মানোবো গোষ্ঠীর ঐতিহ্য। আধুনিক প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগেও তারা তাদের প্রাচীন রীতিনীতি ধরে রেখেছেন। আর রোসেলের ‘ইঁদুর ভুনা’ ভিডিও শুধু ভাইরালই হয়নি, বরং এক আদিবাসী সমাজের গর্ব ও আত্মপরিচয়কে তুলে ধরেছে বিশ্বমঞ্চে।
মন্তব্য করুন
