সোমবার
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কনুইয়ের গুঁতো আর নখের আছড়, মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মেসি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫১ পিএম আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
কলকাতার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির উপস্থিতিকে ঘিরে তৈরি হওয়া ভিড় শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় বিশৃঙ্খলায়
expand
কলকাতার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির উপস্থিতিকে ঘিরে তৈরি হওয়া ভিড় শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় বিশৃঙ্খলায়

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ভারত সফরে এসেছেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসি।

সফরের প্রথমদিনে পশ্চিমবঙ্গের এসেছিলেন তিনি। তবে সেখানে ঘটে গেছে এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা!

কলকাতার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির উপস্থিতিকে ঘিরে তৈরি হওয়া ভিড় শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় বিশৃঙ্খলায়। অতিরিক্ত মানুষের চাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিলে নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছাড়তে হয় আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকাকে।

পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, একপর্যায়ে দর্শকরা স্টেডিয়ামে ভাঙচুর চালিয়েছেন, বেষ্টনী ভেঙে মাঠে ঢুকেছেন এবং কার্পেট, চেয়ার, ফুলের টব থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস লুটও করেছেন।

আর এমন ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে।

বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে এমন পরিস্থিতির কারণে মাঠে নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে শুরু করেছিলেন মেসি, সুয়ারেজ, ডি’পলরা।

মাঠে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন দ্রুত মাঠ ছেড়েছিলেন লিওনেল মেসি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কিনেও তারা একবারের জন্য নিজেদের আইডল কিংবা স্বপ্নের তারকা মেসিকে একটি বারের জন্য দেখতে পাননি।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কেন সময়ের আগেই বেরিয়ে যান মেসি? মাঠে উপস্থিত বিভিন্ন ভাষ্যের বরাতে নতুন তথ্য সামনে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে বলছে, সকাল সাড়ে ১১টায় যুবভারতীর চার এবং পাঁচ নম্বর গ্যালারির মাঝখানের পথ দিয়ে মেসির গাড়ি এসে থামে যুবভারতীর অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের সামনে।

মেসি গাড়ি থেকে নামতেই তাকে ঘিরে ফেলেন শ’খানেক মানুষ-মূলত উদ্যোক্তা, ফটোশিকারি, নেতা, মন্ত্রী এবং তাদের নিকটজনরা।

আনন্দবাজারের ভাষ্য, পশ্চিমবঙ্গের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের লড়াইয়েই শনিবারের এই বিপর্যয় ঘটেছে।

আনন্দবাজারের প্রতিেবেদনে আরও বলা হয়, মেসির গায়ে কার্যত লেপ্টে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

প্রভাবশালীদের ভিড় মেসির সঙ্গে সঙ্গে এগোয়, যথেচ্ছা ছবি তোলার চেষ্টায় শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি।

একে অন্যকে সরানোর চেষ্টা বা ধাক্কাই শুধু নয়, মরিয়া সেলফি শিকারিদের একজনের কনুইয়ে গুঁতো লাগে লুইস সুয়ারেজের পেটে।

এখানেই শেষ নয়, কোনও একজনের নখের আছড়ও লাগে রদ্রিগো ডি’পলের হাতে। মুখে হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, অস্বস্তি অনুভব করতে থাকেন মেসি।

পরিস্থিতি বেগতিক, বুঝে গিয়েছিলেন মেসির নিরাপত্তারক্ষীরাও। তারা আর ঝুঁকি নেননি। দ্রুত মেসিদের সরিয়ে নিয়ে যান মাঠ থেকে।

সল্টলেক স্টেডিয়ামে গোল পোস্টে গিয়ে একটি পেনাল্টি শট নেওয়ার কথা ছিল মেসির।

সে জন্য গোল পোস্টের দিকে আসছিলেনও। তবে শেষ পর্যন্ত ভিড় আর মানুষের বিশৃঙ্খলায় তা নেওয়া হয়নি।

সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, মেসিকে ‘ঠিকমতো হাঁটতেও দেওয়া হচ্ছিল না।

কোনও দিক দিয়েই ভিড় থেকে বেরোতে পারছিলেন না। গ্যালারির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাও পারছিলেন না।’

এর আগে, শুক্রবার রাতে কলকাতায় এসে পৌঁছান মেসি। এর পর থেকেই নাকি তাঁকে ঘিরে দুই মন্ত্রীর মধ্যে লড়াইয়ের শুরু।

মেসি কলকাতা বিমানবন্দরে পা রাখার পরই তাঁকে নিজের ‘দখলে’ নিয়ে ফেলেছিলেন সুজিত।

মেসি কলকাতায় উঠেছিলেন হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে। সেখানে মেসিকে ঘিরে ছিল দমকলমন্ত্রীর লোকজনই।

এখানে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। সেই হোটেলে সুজিত সপরিবার ছিলেন; ছিলেন তাঁর পছন্দের লোকজনও।

নিজের ক্লাব শ্রীভূমির সামনে মেসির ৭০ ফুটের মূর্তি উন্মোচন করানো থেকে বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকার সঙ্গে আলাপচারিতা, সবখানেই সুজিত সক্রিয় ছিলেন।

অন্যদিকে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ মেসির ওপর নিজের প্রভাব দেখাতে চেয়েছিলেন স্টেডিয়ামে। তাই মেসি মাঠে ঢুকতেই তিনি তাঁর লোকদের নিয়ে ঘিরে ফেলেন তাঁকে।

এসময় নিয়ন্ত্রণ হারায় সুজিত। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মাঠে ঢোকার পর তাকে নিজ লোকদের নিয়ে ঘিরে ফেলেন অরূপ। মেসির সঙ্গে ছবি তুলতে তাকে নিয়ে টানাহ্যাচড়া শুরু করেন এই মন্ত্রী।

এছাড়া আশপাশে আরও ছিলেন কলকাতার মাঠের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা, ফুটবলার ও টালিউডের পরিচিত মুখেরা মেসির আশেপাশে ভিড় করতে থাকে। এত ভিড়ের মধ্যে মেসিও অস্বস্তিতে ছিলেন।

একবার তো নিরাপত্তা কর্মী অরুপের ঘেষাঘেষি বন্ধ করতে তাকে সরিয়ে দেন।

এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে থাকার কথা থাকলেও ২২ মিনিট যেতেই মাঠ ছাড়েন মেসি।

ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ভিআইপি সংস্কৃতি।

মেসি মাঠে আসতেই কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি ও আলোকচিত্রী তাকে ঘিরে ধরেন।

এমন পরিস্থিতিতে নিজেরই চলতে অসুবিধা হয়েছে তার, তারপর গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের দিকে মনোযোগ দেওয়া ছিল খুবই কঠিন।

এনডিটিভি লিখেছে, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মেসির চারপাশে ঘিরে ছিলেন একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ। যে কারণে গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা তার দর্শন পাননি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X