

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় আসছে এক বড় পরিবর্তন। পুরনো কাগুজে প্রক্রিয়া পেরিয়ে এবার দলিল রেজিস্ট্রেশন ও সংরক্ষণ যাচ্ছে পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থায়।
সরকার ঘোষণা দিয়েছে- ১৯০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রার অফিসে সংরক্ষিত সব দলিল ধাপে ধাপে স্ক্যান করে অনলাইন ডাটাবেইজে যুক্ত করা হবে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে কয়েকটি ক্লিকেই অনলাইনে দলিল দেখা, যাচাই করা ও কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। ভূমি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে মালিকরা বিদেশে থাকলেও নিজ জমির দলিল সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন— যা দেশে ভূমি সেবার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১১৭ বছরের দলিল একসঙ্গে ডিজিটাল ভাণ্ডারে
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিবন্ধিত সব দলিল ধীরে ধীরে একটি কেন্দ্রীভূত অনলাইন সিস্টেমে যুক্ত করা হবে। কয়েকটি জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে কাজও শুরু হয়েছে।
তবে যেসব সময়ের দলিল— যেমন ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের অস্থির সময়ে- হারিয়ে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো অনলাইনে তোলা সম্ভব হবে না। তাই যাদের কাছে এসব দলিলের কপি আছে, তাঁদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রি অফিসে জমা দিয়ে ডিজিটাল রেকর্ডে যুক্ত করার আবেদন করতে হবে।
দুর্নীতি ও জালিয়াতি রোধে যুগান্তকারী উদ্যোগ
জমি সংক্রান্ত প্রতারণা, জাল দলিল তৈরি এবং অনুপস্থিত মালিকদের জমি দখল- এসব সমস্যা রোধ করাই এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। ডিজিটাল সিস্টেম চালু হলে ঘুষ বা দালাল নির্ভরতা কমবে। আগে যেখানে দলিলের কপি তুলতে অনেকে ১–৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতেন, সেখানে এখন সরকারি নির্ধারিত ফি অনুযায়ী মাত্র কয়েক ক্লিকেই সেবা পাওয়া যাবে।
ভূমি মালিকদের জন্য করণীয়
সিস্টেম কার্যকর হওয়ার পর সরকার একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট চালু করবে, যেখানে দলিল যাচাই, অনুসন্ধান ও অনলাইন কপি সংগ্রহের সুযোগ থাকবে। এমনকি মূল দলিল হারালেও অনলাইন কপি আইনি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হবে।
ভূমি মালিকদের করণীয় বিষয়গুলো হলো:
ডিজিটাল সেবা চালু হওয়ার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
যেসব পুরনো দলিল অনলাইনে নেই, সেগুলোর কপি নিজে থেকে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দেওয়া।
কোনো প্রকার জাল বা সন্দেহজনক দলিল অনলাইনে গ্রহণযোগ্য নয়।
নিজের দলিলের তথ্য সঠিক আছে কি না, তা যাচাই করা।
দীর্ঘমেয়াদি সুফল
জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলার সংখ্যা কমবে।
প্রতারণা, দখল ও হয়রানির সুযোগ বন্ধ হবে।
প্রবাসী নাগরিকদের জন্য দলিল পাওয়া সহজ হবে।
সরকারি সেবা আরও দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে পাওয়া যাবে।
এই ডিজিটাল দলিল সংরক্ষণ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভূমি প্রশাসনে এক নতুন যুগের সূচনা হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন