

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক জোট ও আসনভিত্তিক সমীকরণ।
রাজনীতির প্রায় সব সমীকরণই স্পষ্ট হতে পারে আজ রোববার। বহুল আলোচিত জামায়াত-এনসিপির আসন সমঝোতা কিংবা জোটেরও আত্মপ্রকাশ হতে পারে আজ।
দল এবং দলের বাইরে নানা আলোচনা-সমালোচনা হলেও এই সমঝোতায় অনড় রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এটিকে চূড়ান্ত রেখেই আসন এবং জোটের সার্বিক বিষয়ে নিজেদের দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে উভয় দলই।
এনসিপি সূত্র বলছে, সংস্কার, দলের বৃহত্তর স্বার্থ ও নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবেই মূলত এই জোট বা আসন সমঝোতা হচ্ছে। এখান থেকে সরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। দলের বেশিরভাগ নেতা এতে সম্মতি জানিয়েছেন।
তবে জোট বা আসন সমঝোতার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন সদস্য।
গতকাল গুরুত্বপূর্ণ এই নীতিগত বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন তারা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্য ২১৬ জন। এর মধ্যে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট নিয়ে পক্ষে মত দিয়েছেন ১৮৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা।
কেন্দ্রীয় আরেকটি অংশ সমঝোতার পক্ষে থাকতেই দলের আহ্বায়ককে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া এনসিপির অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুব শক্তি, শ্রমিক শক্তি, ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র শক্তিসহ সবাইকে নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই আস্থার কথা লিখেছেনও তারা।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ দলীয় জোটের সঙ্গে আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি পার্টি) আরও কয়েকটি দল যুক্ত হচ্ছে।
এনসিপি এই বৃহত্তর সংস্কার জোটের পক্ষ নিয়েছে। এই সমঝোতায় এনসিপি অন্তত ৫০ আসন চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৪০ আসনে এনসিপির প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা। এই জোটে এনসিপি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাবে, সেটাই প্রত্যাশা তাদের। দলটি প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে সমঝোতার পর বাকি আসনগুলোতে আর মনোনয়ন না নিয়ে জোটের পক্ষেই কাজ করবেন তারা।
দলের এক নির্বাহী সদস্য বলেন, ‘আজ (গতকাল) রাতে সম্ভাব্য জোটের গুরুত্বপূর্ণ সভা ছিল। সেখানে এনসিপি অন্তত ৪০ আসন এবং জোটের মুখপাত্র হিসেবে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এভাবেই আগাচ্ছে। সব চূড়ান্ত হলে কাল (আজ) জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।’
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন আপত্তি জানিয়েছেন। এর মধ্য থেকে দুজন তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছেন। বাকিরাও এই সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এনসিপির ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ৯ জনই পক্ষে থাকার অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া ছাত্র, যুব ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা নাহিদ ইসলাম এবং আখতার হোসেনের ওপর ভরসা রেখেছেন। কেউ কেউ শুরুতে আপত্তি জানালেও বৃহত্তর স্বার্থে তারা এক হয়েছেন।
এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে জোট করা নিয়ে দলের মধ্যে কিছুটা বিভেদ দেখা দিয়েছে। এই বিভেদ দূর করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। কে পদত্যাগ করবে আর কে করবে না, এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
নেতারা বলেন, এর আগে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী একাধিকবার ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রায় দেড় হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি করে ১২৫ জন প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এখন অল্প কিছু আসনের জন্য কোনো জোটে যাওয়া জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে তারা মনে করছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক সম্পাদক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মো. মুরসালীন, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ।
সমঝোতার পক্ষে আরেক পক্ষের পাল্টা চিঠি: দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই সমঝোতার পক্ষে থাকতে দলের প্রধান বরাবর পাল্টা চিঠি দিয়েছে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির আরেকটি অংশ। চিঠিতে তারা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে টেকসই করা এবং একটি জনমুখী ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিকভাবে সময়োপযোগী ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। সে পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে রেখে এনসিপি যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা কিংবা জোট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, সে বিষয়ে আমাদের পূর্ণ সমর্থন ও সম্মতি রয়েছে। নির্বাহী কাউন্সিলের সুপারিশের আলোকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কর্তৃক গৃহীত যে কোনো জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সুস্পষ্ট সমর্থন ও আস্থা রয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন আরিফুল ইসলাম আদীব, সারোয়ার তুষার, ড. আতিক মুজাহিদ, জাভেদ রাসীন, আরিফুর রহমান তুহিন, সাইফুল্লাহ হায়দার, আতাউল্লাহ, মাহমুদা মিতু, মাহিন সরকার, এহতেশাম হক, আশিকিন আলম, ডা. আব্দুল আহাদ, সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, আলী নাসের খান, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, দিলশানা পারুল, মাহবুব আলম, হাফসা জাহান, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, জুবায়রুল হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনায়েদ, কৈলাস চন্দ্র রবিদাস প্রমুখ।
মন্তব্য করুন

