শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খিলাফত কী, এর সূচনা ও অবসান

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
expand
খিলাফত কী, এর সূচনা ও অবসান

‘খিলাফত’ শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। এর আভিধানিক অর্থ হলো প্রতিনিধিত্ব বা উত্তরসূরির পদ। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে খিলাফত মানে— ১. ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌল কাঠামো এবং ২. মুসলিম শাসনব্যবস্থার একটি সংগঠন।

খিলাফত থেকে উদ্ভূত হয়েছে ‘খলিফা’ শব্দটি, যা মূলত সেই ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব দেন। তাঁকেই বলা হতো আমিরুল মুমিনিন।

খিলাফতের সূচনা

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর সাহাবিদের মধ্যে থেকে চারজনকে পরপর মুসলিম সমাজের নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এঁরা হলেন—

হজরত আবু বকর (রা.)

হজরত উমর (রা.)

হজরত উসমান (রা.)

হজরত আলী (রা.)

ইসলামের ইতিহাসে এঁদের যুগকে খুলাফায়ে রাশেদীন বা সঠিকভাবে পরিচালিত খিলাফতের যুগ বলা হয়।

দ্বন্দ্ব ও বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র

হজরত আলী (রা.) শহীদ হওয়ার পর খিলাফতের প্রশ্নে মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়। তখন সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া খিলাফতের দায়িত্ব নেন এবং পরে তাঁর পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরসূরি করেন। এর মাধ্যমে নির্বাচিত খলিফার পরিবর্তে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের সূচনা হয়। যদিও উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতিমীয় কিংবা উসমানীয় শাসকেরা নিজেদের খলিফা বলে দাবি করে গেছেন।

উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফত

উমাইয়া বংশীয় খিলাফত: দামেস্কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। তবে শিয়া ও খারিজিরা এ শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি।

আব্বাসীয় খিলাফত: ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে উমাইয়াদের পতনের পর আব্বাসীরা বাগদাদকে রাজধানী করে খিলাফত স্থাপন করে।

পাশাপাশি স্পেনে পালিয়ে যাওয়া উমাইয়া রাজপুত্র আবদুর রহমান কর্ডোভায় আলাদা একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন, যা ইতিহাসে পশ্চিমা খিলাফত নামে পরিচিত। এটি টিকে ছিল আনুমানিক ১০০১ সাল পর্যন্ত।

অন্যান্য খিলাফত

ফাতিমীয় খিলাফত: শিয়া ফাতিমীয় বংশ উত্তর আফ্রিকা ও মিসরে ৯০৯ থেকে ১১৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল।

মঙ্গোল আক্রমণের (হালাকু খান, ১২৫৮) পর আব্বাসীদের শাসন ভেঙে যায়, তবে নামমাত্র খিলাফত কিছুদিন মিসরে টিকে ছিল।

উসমানীয় খিলাফত: ১৫১৭ সালে উসমানীয়রা মিসর দখল করে খলিফার উপাধি নিজেদের হাতে নেয়। এর ধারাবাহিকতা শেষ হয় সুলতান ষষ্ঠ মোহাম্মদ পর্যন্ত।

খিলাফতের সমাপ্তি

১৯২২ সালে কামাল আতাতুর্ক ষষ্ঠ মোহাম্মদকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং সুলতানি শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন।

পরে আবদুল মজিদকে প্রতীকী খলিফা হিসেবে বসানো হলেও, ১৯২৪ সালে আতাতুর্ক খিলাফতের পদ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করেন এবং উসমানীয় বংশের সবাইকে নির্বাসনে পাঠান।

পরের বছর আরবের বাদশাহ হুসেন নিজেকে খলিফা দাবি করেন, কিন্তু ইবনে সউদ তাঁকে সেই দাবি ছাড়তে বাধ্য করেন।

এর মাধ্যমে বহু শতাব্দী ধরে টিকে থাকা খিলাফতের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন