বৃহস্পতিবার
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বৃহস্পতিবার
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হুবহু মিলে গেল বেগম খালেদা জিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী

আমিরুল মোমেনীন মানিক
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
বেগম খালেদা জিয়া-ফাইল ছবি
expand
বেগম খালেদা জিয়া-ফাইল ছবি

নির্বাচন শব্দটার সঙ্গে রাজনীতির আলাদা গন্ধ আছে। তবে দলীয় রাজনীতির বাইরেও নির্বাচন হয়। ভিন্ন পরিসরে। আলাদা আঙ্গিকে। জীবনের এ বয়সসীমা পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

প্রথমবার বালক বেলায়। পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন। ছোটদের মধ্যে হলেও সেই সময়ের খরখরা চাটা হয়েছিল সমস্ত পাড়াময়। ভোটার ছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মিছিল করেছে গাঁয়ের এলেবেলে পথে। দুরন্ত ছানাপুনা কিশোর নিয়ে। তবে জিত হয়েছিল আমারই। ছাত্রীরা ভীষণ পছন্দ করতো আমাকে। ওদের সব ভোট পেয়েছিলাম আমি।

দ্বিতীয়বার কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে। প্রশাসন আশ্রিত শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও ভড়কে গিয়েছিল। দু’টি বুথে আমার একচেটিয়া সমর্থন বজ্র পড়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বীর মাথায়। জিতলে পিটিয়ে কলেজ ছাড়া করে দেবে, প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু, না। সেই কষ্ট তাদের করতে হয়নি। কারণ আমি হেরে গেছি। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পেয়েছিলাম। ২৯৮ ভোট।

সর্বশেষ সংবাদকর্মীদের নেতা হওয়ার নির্বাচন। প্রার্থী হওয়ার পর ক’দিন ভিমরি খেয়েছি। চোখে সর্ষে ফুল। মাথায় উকুনের মতো টেনশন, যদি হেরে যাই। যা সম্মান আছে সব যাবে।

অবশেষে নির্বাচন হলো। ও বাবা! সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও বেশি। সর্বোচ্চ ৪৫৭ ভোট পেয়ে ডিইউজে’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য হয়েছিলাম। ডিইউজে’র নির্বাহী সদস্য হিসেবে সৌভাগ্যটা হয়েছিল আমার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাংবাদিকতার যাতনা, সংকট, বৈষম্য আর মনোকষ্ট জানানোর সৌভাগ্য। ২. ২০০৮ সাল। ফিরোজা রঙের শাড়ি পরে এসেছিলেন জাতীয়তাবাদের নেত্রী। অবশ্য ওয়ান-ইলেভেনে তার সঙ্গে একবার কথা হয়েছিল। সরাসরি নয়, ফোনে। তারেক রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে ব্রেকিং এক তথ্য দিয়েছিলাম তাকে। সম্ভবত ডা. দোলন ভাই, ম্যাডামের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এত কাছ থেকে অভিযোগমালা বলার সুযোগ এই প্রথম। অন্যদের মতো আমারো বলার সুযোগ হলো।

মন খুলে বললাম। নিজের পেশা ও জাতীয় রাজনীতির কিছু মারাত্মক অধঃপতনের কথা। ওয়ান-ইলেভেনে বিএনপি’র বিরুদ্ধে কতিপয় সেনাকর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের গোপন অভিপ্রায়ের কথা। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ভারতের সাউথব্লকের ষড়যন্ত্র ও অব্যাহত অপপ্রচারের কথা।

পরবর্তীতে ২০১১ সালে আরেকবার দেখা করার সুযোগ পাই প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানের সঙ্গে জি-সেভেনের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে। সেবারো কথা হয়েছিল বিস্তর। এরপর দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ হলে ২০১৩ সালের মে মাসে আমরা মন খুলে কথা বলেছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তার গুলশানের অফিসে।

বিশেষ সংখ্যা: যাই হোক, কথা শুরু করেছিলাম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি প্রসঙ্গ ধরে। শুরু করেছিলাম আল মাহমুদের “তৃষিত জলধি গল্পের” নিখাদ দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দুঃসাহসী স্মৃতিচারণের মধ্যদিয়ে।

০৩. আল মাহমুদ তার ‘তৃষিত জলধি’তে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে নিয়ে যে ইল্যুশন তৈরি করতে পেরেছেন, বাংলা সাহিত্য এই মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আর কেউ তা করতে পারেননি।

আল মাহমুদ নিজের জবানবন্দির ঢংয়ে লিখেছিলেন এভাবে... আমি একটা বসার জায়গা খুঁজছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম চিমনির ওপাশটায়। সেখানে গিয়েই মনে হলো চিমনির ছায়ার অন্ধকারে কে একজন ছায়ামূর্তি বসে আছে। আমার পদশব্দে ছায়ামূর্তিও সচকিত হয়ে উঠলো, কে?

আমি একটু এগিয়ে জবাব দিতে চমকে উঠে দেখলাম মহামান্য প্রেসিডেন্ট স্রেফ সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে একটা টুলের ওপর বসে আছেন। আমি বললাম, ‘স্যার এত রাতে আপনি এখানে একা?’ ‘ও কবি! না ঠিক একা নই ছাদের নিচে তো অনেক মানুষ ঘুমাচ্ছে। শুধু দেখছি আপনি আর আমিই জেগে আছি। বসুন।’

‘আপনার নিরাপত্তারক্ষীরা?’ ‘তারাও সম্ভবত ঘুমিয়েছ। তা না হলে আমাকে এখানে আসতে দেখে আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকতো নিশ্চয়। ‘আপনার কি এভাবে একা বেরোনো উচিত?’ ‘সম্ভবত নয়। সমুদ্রে চাদরে খেলা দেখবো বলে এসেছি। আমার ঘুম পাচ্ছে না। আচ্ছা, আজ কি পূর্ণিমা?’

‘আগামীকাল কলা পূর্ণ হবে।’ জবাব দিলাম আমি। ‘বসুন কবি।’ মহামান্য প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার আমাকে বসার হুকুম দিলেন। আমি আশপাশে তার সান্নিধ্যে যে বসার একটা টুল খুঁজছিলাম। একটি মাত্র টুলে তিনি নিজেই বসে আছেন। আমি একটু ইতস্তত করে তার টুলটার পাশে ছাদেই বসে পড়লাম। তিনি আপত্তি করলেন না।

‘আপনার কি ঘুমের অসুখ?’ ‘ইনসোমনিয়া।’ জবাব দিলাম আমি।

‘কবিদের, ভাবুকদের একটু অনিদ্রা রোগ থাকা মন্দ নয়। এই চাঁদ, এই সমুদ্র আর সীমাহীন ঢেউয়ের ছলাৎকর শোনার জন্য এক ধরনের মানুষ দরকার। কী বলেন?’

আমি বললাম, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্টের কি ঢেউ গোনার বাতিক আছে?’ ‘না আমার কোনো অনিদ্রা রোগ নেই। আমার ঘুম খুব সাউন্ড। আজই শুধু ঘুম পাচ্ছে না। শারীরিক শ্রমের কমতি পড়লেই আমার ঘুমের ব্যাঘাত হয়।’ বললেন তিনি।

আমরা উভয়ই কতোক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। আকাশে তখন মেঘের স্তরটা অন্তর্হিত হয়ে আকাশ-সমুদ্রব্যাপী জোছনার একটি দীপ্তি ফুটে উঠেছে। ‘আপনি সাগরকে নিয়ে কয়টা কবিতা লিখেছেন?’ অকস্মাৎ নীরবতা ভেঙে তিনি প্রশ্ন করলেন। আমি চুপ করে রইলাম। মনে মনে ভাবলাম, আমার সমুদ্রের ওপর একটাও রচনা নেই, আর্শ্চয! ‘একটাও লিখেননি, তাই না’ আমি লা-জবাব হয়ে থাকলাম।

‘অথচ সমুদ্র হলো অর্ধেকটা বাংলাদেশ। সমুদ্র না থাকলে আমাদের জীবন অর্থহীন হতো। এই সাগরের অভিজ্ঞতা নেই আমাদের একালের কবিদের। কী বেদনাদায়ক!

আমি তাড়াতাড়ি বললাম, ‘কাজী সাহেব লিখেছেন। ‘হে সিন্ধু বন্ধু মোর ...।’ ‘নজরুল সমুদ্রকে বুঝতেন বলেই তার জীবন ছিল উত্তাল। নির্ভীকতা ছাড়া বড় হওয়া যায় না। আপনি নদীর ওপর অজস্র লিখেছেন। আমি পড়েছি। চমৎকার অন্তর্দৃষ্টি আপনার। এখন সমুদ্রের দিকে তাকাতে হবে। সমুদ্রই মানব হৃদয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে দেয়।’

বেশ উদ্দীপিতভাবে প্রেসিডেন্ট কথা বলছেন দেখে আমি বললাম, ‘কিন্তু আমার তো সমুদ্রের কোনো অভিজ্ঞতা কিংবা সমুদ্রের সঙ্গে জীবনযাপনের কোনো সস্পর্ক নেই মিস্টার প্রেসিডেন্ট।’

‘থাকা কি উচিত ছিল না?’

এ প্রশ্নের কোনো জবাব খুঁজে না পেয়ে চুপ করেই থাকলাম। ‘অথচ উপকূলবাসী অসংখ্য মানুষ, নাবিক, জেলেদের রয়েছে রূপকথার চেয়েও চাঞ্চল্যকর জীবনধারা; যা সমুদ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনি তো এদেশেরই কবি।

‘সমুদ্র সম্বন্ধে এখন থেকে আমার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। আপনার কথাগুলো আমার খুবই ভালো লেগেছে মি. প্রেসিডেন্ট।’ বেশ গাঢ়স্বরে কথাগুলো বললাম আমি। তিনি হাসলেন কিংবা প্রীত হলেন কিছুই বোঝা গেল না। বাইরে বহুদূরে একটা দূরাগত জাহাজের আলো দরিয়ার ঢেউয়ে হাতড়ে বেড়াতে লাগলো। প্রেসিডেন্ট সেদিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। মনে হলো আমার উপস্থিতি তিনি সম্পূর্ণ বিস্মিত হয়েছেন।

আমি সাহস করে বললাম, ‘এখন আপনার ঘুমাতে যাওয়া উচিত।’ ‘আপনি যান। আমি আরও কিছুক্ষণ বসবো। যান ঘুমান গিয়ে। কাল সকালে নৌ-মহড়া দেখবেন।’

আমি উঠে দাঁড়ালাম। তাকে সালাম জানিয়ে সিঁড়ির কাছে এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে তাকে আবার দেখার জন্য পেছনে ফিরলাম। এখান থেকে তার চেহারাটা পরিষ্কার দেখা না গেলেও চাদরে স্পষ্ট আলোয় নিঃসঙ্গ অবস্থানটি বোঝা যাচ্ছে, বসে আছেন তিনি বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গের দিকে মুখ করে।

নিঃসঙ্গ একজন মানুষ! এখন তার চোখে কালো চশমা জোড়া থাকার কথা নয় তবুও আমার মনে হলো তার ভিন্ন চোখ দু’টি বুঝি এখনো কোনো কালো আবরণের ভেতর থেকে সন্ধানী দৃষ্টি ফেলে জলের ভেতর জেগে ওঠা বাংলাদেশের নতুন কোনো মাটিকে দেখছেন। নতুন পলির মানচিত্র তৈরি হচ্ছে তার হৃদয়ে। আল মাহমুদের এই অনুভূতির নির্যাস আমি তুলে ধরলাম ম্যাডামের কাছে। তিনিও স্মৃতির দহলিজে তার স্বামীর শৌর্যের কথা হয়তো মনে করছিলেন তখন।

৪. বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে এসে বললাম, ম্যাডাম আপনি ক্ষমতায় থাকতে, এতগুলো টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিলেন, কতো সাংবাদিককে প্লট দিলেন, কিন্তু দু’-একজন ছাড়া কেউই এই দুঃসময়ে সত্য উচ্চারণ করছে না, বরং তারাও অপপ্রচারকারী মিডিয়া যন্ত্রের ক্রীড়নকে পরিণত হয়ে স্বৈরাচারের সুবিধা নিচ্ছে। কথাগুলো দলীয় কর্মীর মতো নয়, পেশাদার একজন সাংবাদিক হিসেবেই বললাম।

বেগম জিয়া মন দিয়ে শুনলেন। কখনো ভ্রূ কুঁচকালেন আবার কখনো স্থির থাকলেন। সবার কথা শেষ হলো। শুরু হলো বেগম জিয়ার নসিহত। কিন্তু একি! কোনো মোটা বক্তৃতা তিনি দিলেন না, একেবারে উপলব্ধির কথাগুলো বললেন। তিনি তার পাশে বসে থাকা বিএনপি’র প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই যে সাংবাদিক মানিক সাহেব আজ যে কথাগুলো বললেন, তা কি আমরা অস্বীকার করতে পারি। আমি শামসুল ইসলাম সাহেবদের তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, গণমাধ্যম গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলাম, আমাদের পক্ষে লোক গড়ে তোলার জন্য বলেছিলাম, কিন্তু এরা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

ম্যাডামের সত্য বচন শুনে প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী চুপসে গেলেন। আর কোনো মন্তব্য করলেন না।

ব্যর্থতার কারণেই যে কঠিন প্রায়শ্চিত্ত, তাও স্বীকার করলেন বেগম খালেদা জিয়া। অভিভূতই হলাম। মনের ভেতর গেঁথে রইল তাঁর একটি কথা। ‘কোনো শাসক যখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন শক্তিশালী বিদেশি প্রভুরাও তাকে ছুঁড়ে ফেলে ডাস্টবিনে।’

বেগম জিয়া বললেন, মুখের চেনা চাটুকারদের আর নয়। মতবিনিময় শেষ হলো। ঘরে ফেরার পথে বারবার মনে হচ্ছিল, বেগম জিয়ার উপলব্ধিগুলো কতটা গভীর নাকি বাউরি বাতাস?

৫. আজ এতো বছর পর বেগম খালেদা জিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি মিলে গেছে। গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। হাসিনার পৃষ্ঠপোষক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রেস উইং আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এ রায় নিয়ে কোনো আফসোস বা প্রতিবাদ তো করেনিই, বরং বলেছে ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত। আমরা সবসময় এই লক্ষ্য পূরণের জন্য সকল সংশ্লষ্টিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যোগাযোগ করবো।’ তার মানে মোদিও এখন আর বলছেন না যে, হাসিনার ফাঁসির দণ্ড যথার্থ নয়। বেগম জিয়ার সেই কথাই তো মিলে গেল, জনবিচ্ছিন্ন শাসককে তার প্রভুও মর্যাদা দেয় না। যেটা লেন্দুপ দর্জির ক্ষেত্রেও ঘটেছিলো।

৬. রাজনীতিতে কথা দেওয়া যায়। কিন্তু রাখা যায় না। ২০০৬-০৭ সালের কথা। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের কাছে অসংখ্যবার গিয়েছি। অসম্ভব আন্তরিকতা পেয়েছি সবসময়। তাঁর সাত নম্বর বেইলী রোডের বাসায়। আর মতিঝিলে ইসলাম টাওয়ারের চেম্বারে।

ঘরে ঘরে গিয়ে জনমানুষের কথা শুনবেন তিনি। জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করবেন। বারবার এ আকাঙ্ক্ষার সেঁজুতি জ্বালিয়েছেন তিনি। কিন্তু কই? ওকালতির ব্যস্ততা তাকে জনতার কাতারে দাঁড়াতে দেয়নি। জনতাও তাঁর সুরম্য চেম্বারের দরজার সামনে দাঁড়াতে পারেনি কখনও। কারণ একটি মামলায় একঘণ্টা শুনানির জন্য ড. কামাল হোসেন ফি নেন কয়েক লাখ টাকা। আমপাবলিকের কাছে অত টাকা কই। তবে, কেউ তার কাছে পৌঁছাতে পারলে তিনি নিঃস্বার্থভাবে উপকারও যে করেন, সেটাও অস্বীকার করা যায় না।

আমার সৌভাগ্যই বটে। রিপোর্টার না হলে কাছ থেকে এতো কিছু দেখার ভাগ্য কখনও হতো না। সাবেক বিচারপতি হাবিবুল ইসলাম ভূঁইয়া আমার কলার চেপে ধরলেন। আবার ক্ষমাও চাইলেন। দলবাজির নেড়িকুকুরটার পা চাটিনি বলে অসহায় নিরাপত্তাকর্মীরা ক্যান্টনমেন্টে ঢুকতেই দিলো না। বাবার পেনশনের টাকা পেতে ছয় মাস লাগবে বলে নিয়ম দেখালো শিক্ষাভবনে জন্তুটা। আবার উপরের ফোন পেয়ে বুনোশুয়োরের মতো ঘোৎ ঘোৎ করে তিনদিনেই কাজটা করে দিলো। মতান্ধ হইনি বলে দীর্ঘ ১৬ বছর আটকে ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ।

৭. সুলেমান চাচা এসেছিলেন জামালপুর থেকে। চাচা জানালেন সর্ষের ভালো ফলন হয়নি এবার। খাঁটি তেলের মারাত্মক সংকট হবে। আমি হা-হা-হা করে হেসে দিলাম। চাচা অবাক হলেন। কী হলো মানিক হাসছো ক্যানো? চাচাজান, তেলের অভাব হবে না। সর্ষের ফলন ভালো না হোক, তেল দেওয়ার মতো তেলের অভাব হবে না। লাগলে তুমিও নিয়ে যেয়ো।

৮. কেউ কথা রাখুক না রাখুক। কথা রেখেছেন বরিশালের গিটার বাদক ও কণ্ঠশিল্পী রিমন হাসান। অসহায় একটি মেয়ে। নাম জান্নাত। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, যার কাছে স্বপ্নের মতো। ইজ্জত বিক্রি করেই ভাত জোটাতে হবে, নইলে মৃত্যু। এমন অসহায় একজন বোনের কান্নায় অন্তর কেঁপে উঠেছিল রিমনের। জান্নাতকে আশ্রয় দেবে কথা দিয়েছিল। নিজের টানাপড়েনের জীবনে নিরাপত্তা আর ভালোবাসার চাদরে ঢেকে দেবে তাকে। কথা রেখেছেন বাজনা শ্রমিক রিমন হাসান। শ্রাবণের প্রথম দিনে জান্নাতকে বিয়ে করেছে সে। স্যালুট রিমন হাসান, আপনাকে।

লেখক: ইউনেস্কো ক্লাব পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক, লেখক ও কণ্ঠশিল্পী।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X