

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


“পারমাণবিক বোমা”—শব্দটি শুনলেই মনে ভেসে ওঠে ধ্বংস, আতঙ্ক আর মানব সভ্যতার ওপর এক অদৃশ্য চাপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত, এই অস্ত্রের ব্যবহার কিংবা হুমকি সব সময়ই এসেছে বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দিক থেকে।
সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ চায় এই ভয়ংকর অস্ত্র চিরতরে বিলুপ্ত হোক, যেন কোনোদিনও আর মানুষ তার হাতে নিজের প্রজাতিকে হত্যা না করে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—কেন এখনও এই অস্ত্র পরাশক্তিদের কাছে রয়ে গেছে? এটি কি সত্যিই নিরাপত্তার জন্য, নাকি বিশ্ব শাসনের এক কৌশল?
বড় বড় দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা, নিজেদের হাতে শত শত পারমাণবিক বোমা রেখে দেয় “নিরাপত্তা”র অজুহাতে। অথচ অন্য কোনো রাষ্ট্র সামান্য এই প্রযুক্তির কাছাকাছি গেলেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নিষেধাজ্ঞা, চাপ, এমনকি সামরিক আঘাত।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাও এই বৈষম্যমূলক নীতিরই স্পষ্ট উদাহরণ। নিজের সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর অস্ত্র মজুদকে বৈধতা দেয়, আর ভিন্ন পথে হাঁটলেই তাদের “ঝুঁকি” আখ্যা দেয়—এ এক প্রকাশ্য বৈশ্বিক পক্ষপাতিত্ব।
অস্ত্র যখন ব্যবসা, শান্তি তখন বিলাসিতা
পারমাণবিক ও অন্যান্য সামরিক অস্ত্র এখন কেবল নিরাপত্তার বিষয় নয়—এগুলো বিশাল এক বহুজাতিক বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। অস্ত্র উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রির এই চক্র সচল রাখতে দরকার দ্বন্দ্ব, উত্তেজনা ও যুদ্ধ।
পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মানবতা ও শান্তির ভাষণ অনেকটাই কূটনৈতিক অভিনয়, যার উদ্দেশ্য আসলে রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব ধরে রাখা।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিচারিতা: মুখের কথা বদলায়, নীতি নয়
কোনো মিত্র রাষ্ট্র যখন আগ্রাসী হয়ে ওঠে, যুক্তরাষ্ট্র তখন নীরব থাকে কিংবা যুক্তি খুঁজে বের করে। আর কেউ তাদের স্বার্থের বাইরে কিছু করলে, তারা তৎক্ষণাৎ তাকে “সন্ত্রাসী”, “হুমকি” কিংবা “বিশ্বশান্তির জন্য বিপদ” ঘোষণা করে।
এক হাতে নিজেরা অস্ত্র ধরে রাখে, অন্য হাতে সবার জন্য শান্তির শিক্ষা দেয়—এই ভণ্ডামিতে আজকের পৃথিবী আর বিভ্রান্ত নয়, বরং বিরক্ত ও ক্লান্ত।
প্রকৃত শান্তির পথ: পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব
আমরা এমন এক পৃথিবী চাই যেখানে ভয় নয়, পারস্পরিক সম্মান ও ন্যায্যতা হবে নিরাপত্তার ভিত্তি। যেখানে কেউ কাউকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দমন করবে না।
পারমাণবিক অস্ত্র যে-ই ব্যবহার করুক, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং পৃথিবীর অস্তিত্ব নিজেই।
শেষ পর্যন্ত, পৃথিবীকে নিরাপদ করতে হলে কেবল অস্ত্রের সংখ্যা কমালেই হবে না—প্রয়োজন বিশ্ব নেতৃত্বের মানসিকতার পরিবর্তন। জাতিসংঘ আজ অনেকটাই দাঁড়িয়ে আছে নিস্তেজ এক প্রতিষ্ঠানের মতো, যার ভেতর থেকে নেতৃত্বের শক্তিশালী সুর খুব কমই শোনা যায়।
তবুও আশা থাকতে হবে—একদিন পৃথিবীর বিবেক একসঙ্গে উচ্চারণ করবে: “যথেষ্ট হয়েছে, এবার শান্তির পথে ফিরি।”
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
