

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল পুনরায় শুরু হচ্ছে। এবার থাকছে রাত্রিযাপনের সুযোগও। তবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকই সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন, আর ভ্রমণকারীদের মানতে হবে সরকারের দেওয়া ১২ নির্দেশনা। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটায় জাহাজ ছেড়ে যাবে এবং পরের দিন বেলা তিনটায় সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবে। পর্যটকরা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস টানা ভ্রমণ করতে পারবেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বাসসকে জানান, এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন—এই চারটি জাহাজকে কক্সবাজার–সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। নিরাপত্তার কারণে পূর্বের মতো টেকনাফ নয়, বরং এবার কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর হয়ে সরাসরি সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, রাত্রিযাপনের সুযোগ না থাকায় নভেম্বর মাসে পর্যটকদের আগ্রহ কম ছিল, ফলে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে দুই মাস থাকার সুযোগ থাকায় পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে, এবং সেদিন থেকেই জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, পর্যটক পরিবহনের সময় জাহাজগুলো কঠোর নজরদারিতে থাকবে। প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে যেতে দেওয়া হবে না। এজন্য নুনিয়ারছড়া ও সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ভ্রমণসংক্রান্ত ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাশ এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে উঠবে বলে আশা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
মন্তব্য করুন

