বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূমি মালিকদের জরুরি করণীয়

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৭ পিএম
ভূমি মন্ত্রণালয়
expand
ভূমি মন্ত্রণালয়

বর্তমানে বাংলাদেশে জমির মালিকানা প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলো নামজারি (মিউটেশন)। জমি রেজিস্ট্রেশনের পরপরই এটি সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক, যা সরকারিভাবে আপনাকে জমির বৈধ মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে অসাবধানতা বা তথ্যের ভুলের কারণে অনেক আবেদনকারীকেই নামজারি বাতিল হওয়ার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ভূমি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমি মালিক বা ক্রেতাদের অসতর্কতার কারণে প্রায়শই যে ১০টি সাধারণ ভুল হয়ে থাকে, যার ফলে নামজারি আবেদন বাতিল হয়, তা নিচে তুলে ধরা হলো।

তথ্যের অমিল ও ভুল

জমির নথিপত্র এবং ব্যক্তিগত তথ্যে ছোট ভুলও নামজারি বাতিলের কারণ হতে পারে:

  • দাগ নম্বরে ভুল: দলিলের দাগ নম্বর যদি রেকর্ড বা খতিয়ানের সঙ্গে না মেলে, তবে আবেদন বাতিল হবে।
  • করণীয়: দলিল করার আগে খতিয়ান দেখে সঠিক দাগ নম্বর নিশ্চিত করা।
  • চৌহত্তিতে (সীমানায়) ভুল: মালিকানা বিবরণ, দাগ, মৌজা, সাবেক মালিকের নাম—এসব তথ্যে ভুল থাকলে নামজারি হবে না।
  • করণীয়: অভিজ্ঞ দলিল লেখকের মাধ্যমে প্রতিটি তথ্য একাধিকবার যাচাই করা।
  • খতিয়ান নম্বরে অমিল: দলিলে উল্লেখিত খতিয়ান নম্বর যদি সর্বশেষ রেকর্ডের সঙ্গে না মেলে, তবে তা অগ্রহণযোগ্য।
  • করণীয়: সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী খতিয়ান নম্বর সঠিকভাবে দলিলে উল্লেখ করা।
  • ভোটার আইডি ও দলিলের নামের অমিল: ভোটার আইডি কার্ডে থাকা নামের সঙ্গে দলিলের নামের হুবহু মিল না থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
  • করণীয়: উভয় নথির নাম এক কিনা তা যাচাই করে প্রয়োজন হলে সংশোধন করা।

মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা জমির ইতিহাস বা মালিকানা ধারাবাহিকতার ত্রুটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করে:

  • মালিকানা ধারাবাহিকতায় ভুল: সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী জমির মালিকানার ইতিহাস সঠিকভাবে দলিলে উল্লেখ না থাকলে নামজারি হয় না।
  • করণীয়: কমপক্ষে ২৫ বছরের মালিকানা ইতিহাস যাচাই করে দলিলে তা উল্লেখ করা।
  • একই জমি পূর্বে অন্যের নামে নামজারি: জমি একাধিকবার বিক্রি হলে বা বিক্রেতা তার সীমাবদ্ধ অংশের বাইরে বিক্রি করলে পরবর্তীতে ক্রেতার নামজারি বাতিল হয়।
  • করণীয়: জমি কেনার আগে নামজারি রেকর্ড ও দাগ নম্বর যাচাই করা।
  • অংশের বেশি জমি বিক্রি: ওয়ারিশদের কেউ কেউ নিজের প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করলে পরবর্তীতে ক্রেতাকে সমস্যায় পড়তে হয়।
  • করণীয়: বন্টননামা ও ওয়ারিশ সনদ দেখে বিক্রেতার বিক্রয় ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

সরকারি বা আইনি জটিলতা জমির আইনি অবস্থা যাচাই না করা হলে নামজারি বাতিল নিশ্চিত:

  • অর্পিত সম্পত্তি থাকা: সরকারি নিয়ন্ত্রিত (অর্পিত) সম্পত্তি ভুলবশত ব্যক্তিগত মালিকানা ভেবে বিক্রি করলে নামজারি বাতিল হয়।
  • করণীয়: ভূমি অফিস থেকে দাগ অনুযায়ী জমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত হওয়া।
  • খাস জমি থাকা: ব্যক্তিগত জমির মধ্যে যদি সরকারি খাস জমি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে সেই অংশে নামজারি হয় না।
  • করণীয়: জমির প্রতিটি অংশ খতিয়ান ও দাগ অনুযায়ী পরীক্ষা করা।
  • নদীভাঙন বা সরকারি খাস জমির অংশ থাকা: জমির কোনো অংশ যদি প্রাকৃতিক কারণে (নদীভাঙন) বা সরকারি খাস জমি হয়ে থাকে, তাতে নামজারি বাতিল হয়।
  • করণীয়: জমির ভৌগোলিক ও আইনি অবস্থা মাঠ পর্যায়ে যাচাই করা।

নামজারি রিজেক্ট হলে করণীয় নামজারি আবেদন বাতিল হলে ঘাবড়ে না গিয়ে এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:

  • কারণ জানুন: এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে রিজেকশনের বা বাতিলের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হোন।
  • সংশোধন ও নতুন আবেদন: বাতিলের কারণ অনুযায়ী ত্রুটি সঠিকভাবে সংশোধন করে পুনরায় নতুন আবেদন জমা দিন।
  • দালাল এড়িয়ে চলুন: দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।
  • আইনি সহায়তা: প্রয়োজনে উপজেলা ভূমি অফিস বা অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিন।

জমির বৈধ মালিকানার প্রমাণ হিসেবে নামজারি অত্যন্ত জরুরি। জমি কেনার পূর্বেই দলিল, দাগ, খতিয়ান, এবং মালিকানা ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা আবশ্যক।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন