

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা দেশের বহু মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। মা কুকুরটি সন্তান হারিয়ে যেভাবে এদিক–ওদিক ছুটে বেড়িয়েছে, তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
৩০ নভেম্বর উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টার কমপ্লেক্সের সামনে ঘটনাটি ঘটে। পরদিন থেকেই মা কুকুরটি ওলানভর্তি দুধ নিয়ে ছানাদের খুঁজে ফেরে। মাত্র কয়েক দিন আগেই ছানাগুলো জন্মেছিল। কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচে কুকুর ছানাগুলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন—তদন্তে দেখা যায়, ওই কোয়ার্টারে থাকা এক নারীর ছেলে বাচ্চাগুলোকে বস্তায় বেঁধে পুকুরে ফেলে দেয়। পুলিশ পরে পাশের জলাশয় থেকে বাচ্চাগুলো উদ্ধার করে, তবে তখন তারা মারা গেছে। ঘটনাটির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই নারীকে কোয়ার্টার থেকে বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এদিকে মা কুকুরকে চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
ঢাকা থেকে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার’ নামে একটি প্রাণি কল্যাণ সংগঠনও ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে ঈশ্বরদী যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
কুকুর-বিড়াল হত্যার ঘটনা নতুন নয়। উদাহরণ হিসেবে গত ৪ নভেম্বর বগুড়ার এক গ্রামে একটি বিড়ালকে জবাই করার ঘটনায় ‘বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ থানা জিডি করে। সংগঠনের সদস্য এমরান হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিড়ালের মরদেহ উদ্ধার করতে সহায়তা করেন। তার ভাষ্যে অভিযুক্ত নারী বাড়ির সামনে ধারালো বটি দিয়ে বিড়ালটিকে হত্যা করে ধানক্ষেতে ফেলে দিয়েছিল।
পুলিশ সুরতহাল করে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। এরপর আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এমরান হোসেন বলেন বাংলাদেশের প্রাণিকল্যাণ আইনে সাধারণ মানুষ সরাসরি মামলা করতে পারে না। থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ অনেক সময় এটিকে ‘অপরাধের বাইরে’ বলে গণ্য করে। কিন্তু পুলিশের সুরতহাল ও আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে মামলাটি এগিয়ে যায়।
আইন কী বলছে? সাধারণ মানুষ কি মামলা করতে পারে?
২০১৯ সালে নতুন প্রাণিকল্যাণ আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুযায়ীসাধারণ মানুষ সরাসরি মামলা করতে পারবে না। আইনের ধারা অনুযায়ী, মামলা করতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার মনোনীত ভেটেরিনারি সার্জনের লিখিত অভিযোগ প্রয়োজন। অর্থাৎ, ঘটনাটি যতই নির্মম হোক, একজন সাধারণ নাগরিক নিজের উদ্যোগে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না।
আইনজীবী সাকিব মাহবুব জানাচ্ছেন এই কারণে আইনের প্রয়োগ জটিল হয়ে পড়ে, কারণ প্রমাণ সংগ্রহ ও অভিযোগ দাখিল সম্পূর্ণভাবে অধিদপ্তরের ওপর নির্ভরশীল।
বিকল্প: পেনাল কোড ১৮৬০ (ধারা ৪২৯) যদি কোনো প্রাণীর মূল্য ৫০ টাকা বা তার বেশি প্রমাণ করা যায়, তাহলে ধারা ৪২৯ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি।
তবে পথকুকুর বা পথবিড়ালের “মূল্য" নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় আদালতে প্রয়োগ করা চ্যালেঞ্জিং।
২০১৯ সালের প্রাণিকল্যাণ আইনে শাস্তি কত?
আইন অনুযায়ী মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা: অপরাধ। অঙ্গহানি, বিষ প্রয়োগ, নির্যাতন: অপরাধ হিসেবে গণ্য।
আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি: প্রথমবার: ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা। দ্বিতীয়বার: ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। এই শাস্তি পোষ্য প্রাণী ও পথপ্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান এই আইন অনুযায়ী অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতও এই অপরাধের বিচার করতে পারে।
আইনে আরও বলা হয়েছে প্রাণী মারাত্মকভাবে অসুস্থ বা সংকটাপন্ন হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে ‘পেইনলেস’ মৃত্যু ঘটানো যেতে পারে।
সাধারণ ব্যক্তি সরাসরি মামলা করতে পারবেন না, প্রাণিসম্পদ বিভাগকে লিখিত অভিযোগ দিতে হবে, পুলিশ নিজে চাইলে ঘটনা তদন্ত করতে পারে, প্রয়োজনে পেনাল কোডে মামলা হতে পারে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছরের কারাদণ্ড।
মন্তব্য করুন

