শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ডিম থেরাপি’ দেওয়ার পদ্ধতি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ এএম
expand
‘ডিম থেরাপি’ দেওয়ার পদ্ধতি

মানুষের অসুখ-বিসুখ, দুর্ভাগ্য বা নানা অজানা সমস্যার মোকাবিলায় প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে অগণিত লোকাচার।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আগে মানুষ নির্ভর করত প্রকৃতি, আচার-অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসের ওপর। সেই বিশ্বাসে বিশেষ স্থান পেয়েছে ডিম। বহু দেশে এখনো চালু আছে এক ধরনের লোকচিকিৎসা বা আচার, যেটি পরিচিত ‘ডিম থেরাপি’ নামে। প্রশ্ন হলো— সত্যিই কি ডিম দিয়ে রোগ সারে, নাকি কেবলই কুসংস্কার?

গ্রামীণ সমাজে ডিমের ব্যবহার

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক গ্রামে আজও দেখা যায়— হঠাৎ শিশু অসুস্থ হলে বা দৃষ্টিদোষের আশঙ্কা থাকলে তার মাথার চারপাশে কাঁচা ডিম ঘুরিয়ে পরে সেটি ভেঙে দেখা হয়। ধারণা করা হয়, অসুস্থতার খারাপ প্রভাব বা নজর ডিমে চলে যায়।

শুধু আমাদের দেশেই নয়, মেক্সিকো, পেরু, কিউবা কিংবা ফিলিপাইনেও একই ধরনের রীতি প্রচলিত। লাতিন আমেরিকার অনেক জায়গায় একে বলা হয় লিম্পিয়া। সেখানে শরীর মুছে নেওয়ার পর ডিম ভেঙে পানিতে রাখা হয় এবং ডিমের ভেতরের আকৃতি দেখে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করা হয়। আবার কিছু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস, ডিম জীবনের প্রতীক— তাই এটি দিয়ে শুদ্ধিকরণ করলে নেতিবাচক শক্তি দূর হয়।

ইতিহাসে ডিমকে ঘিরে বিশ্বাস ডিম নিয়ে নানা বিশ্বাস হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে ডিমকে ধরা হতো নতুন জীবন ও উর্বরতার প্রতীক হিসেবে। ইউরোপের মধ্যযুগেও নানা সম্প্রদায় অশুভ আত্মা তাড়াতে ডিম ব্যবহার করত। ভারতীয় উপমহাদেশেও লোকজ চিকিৎসায় ডিমের ব্যবহার বহু পুরোনো, বিশেষত গ্রামীণ সমাজে এখনো এর চর্চা আছে।

পুষ্টিগুণ ও আধুনিক প্রয়োগ

ডিম প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস— এটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত। ডায়েটে ডিম রাখলে শরীর সুস্থ থাকে। চুল ও ত্বকের যত্নেও ডিম ব্যবহারের প্রচলন আছে— যেমন হেয়ার মাস্ক বা ফেস প্যাক। অনেক সময় এসবকেই মজা করে ‘ডিম থেরাপি’ বলা হয়।

তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে—

ডিম ঘুরিয়ে রোগ সারানো বা ডিম ভেঙে রোগ নির্ণয় করার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

বরং কাঁচা ডিমের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এতে স্যালমোনেলা জাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

ডিমের পুষ্টি ও সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহার গ্রহণযোগ্য হলেও একে ‘চিকিৎসা’ বলা যায় না।

সংস্কৃতি নাকি কুসংস্কার?

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের রীতি মানুষকে মানসিক ভরসা দেয়। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক শান্তি রোগীর মনোবল বাড়ায়। তাই ডিম থেরাপি হয়তো চিকিৎসার বিকল্প নয়, কিন্তু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই এখনো টিকে আছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন