

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


টানা চার মাস ধরে দেশের মোট রফতানি আয় নিম্নমুখী। তৈরি পোশাক খাতে অর্ডার কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি নিষ্পত্তিও কমছে, যা সামনের মাসগুলোতেও রফতানি আয় আরও সঙ্কুচিত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উৎপাদক ও রফতানিকারকদের মতে, ইউরোপের বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারত ও চীন কম দামে বেসিক পোশাক সরবরাহ করে ক্রেতা টানছে।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের বোঝা স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর চাপানোর প্রবণতাও চাপে ফেলছে শিল্পকে।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে নতুন অর্ডার আসবে না, বরং বর্তমান ক্রয়াদেশও ঝুঁকিতে পড়বে। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দূর করতেই তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা জুলাই–অক্টোবর সময়কালে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১৩.৮১ শতাংশ।
একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ১.৮৭ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্যের ক্ষেত্রে এলসি খোলা কিছুটা বাড়লেও নিষ্পত্তিতে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।
এই ধসের প্রতিফলন পড়েছে তৈরি পোশাক রফতানিতে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো–ইপিবির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে পোশাক রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩১৪.০৯ কোটি ডলার- গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কম।
বিটিএমএ–এর সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান বলেন, পোশাক খাতের মন্দা পুরো রফতানি খাতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নভেম্বরে মোট রফতানি আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮৯.১৬ কোটি ডলার। তবে জুলাই মাসের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে পাঁচ মাস মিলিয়ে রফতানি আয় সামান্য-শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ-বেড়েছে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্কের একটি অংশ আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা অনৈতিক এবং আমাদের পক্ষে বহন করা অসম্ভব।”
বিজিএমইএ পরিচালক রশিদ আহমেদ সোহাইনীর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট শুল্ক–চাপ ভারতের ও চীনের জন্য ইউরোপের বাজার দখলের সুযোগ তৈরি করেছে। তাদের কম দামের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তবে তৈরি পোশাক খাতের দুরবস্থার মধ্যেও চামড়া শিল্প ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। নভেম্বরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি আয় হয়েছে ৯.৮ কোটি ডলার-গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের পরামর্শ, শুধু প্রচলিত পণ্য নয়-উদীয়মান খাতেও বহুমুখীকরণ জরুরি। নতুন খাতে বিলিয়ন ডলারের রফতানি সক্ষমতা তৈরি না হলে ভবিষ্যৎ টেকসই হবে না।
অর্থনীতিবিদদের মূল্যায়ন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি শতাংশের হিসাবে ‘সুবিধাজনক’ মনে হলেও বাস্তবে তা দেশের রফতানিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ইউরোপীয় বাজারেও বাড়তি শুল্কের চাপ বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতিনির্ধায়কদের সক্রিয় ভূমিকা নেওয়াই এখন জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন।
ড. মাহফুজ কবীর মনে করেন, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল এবং বাইসাইকেল-এই সম্ভাবনাময় খাতগুলোও বড় ধরণের সংকটে পড়েছে, যা দ্রুত মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন

