

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপুল অংশই চলছে বেসরকারি উদ্যোগে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য বলছে, সারাদেশে মাধ্যমিক স্তরের মোট ২১ হাজার ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৫৭টি বেসরকারি। অর্থাৎ প্রায় ৯৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই বেসরকারিভাবে পরিচালিত।
অন্যদিকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ৬৯১টি। পাশাপাশি ৬৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আপগ্রেড করা হলেও চলতি বছরের মার্চে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাবিদদের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আধিক্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে বড় বাধা তৈরি করছে। এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগেরই পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। সরকারি স্কুলের বড় অংশ শহরমুখী হওয়ায় গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শহর ও গ্রামের মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্য ক্রমশ বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, “বেসরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে মান বজায় রাখার নিয়ম থাকলেও তা কার্যকর হয় না। যোগ্য শিক্ষক সংকট এবং নিয়োগে অনিয়ম শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করছে। সরকার যদি ধাপে ধাপে জাতীয়করণ শুরু করে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।”
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষার পরবর্তী ধাপ মাধ্যমিক শিক্ষা। এ স্তর দুর্বল হলে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা হোঁচট খাবে। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের বাইরে, যেখানে শিক্ষার পরিবেশ নেই। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নীতিমালা ছাড়া বৈষম্য আরও বাড়বে।”
বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৮৭ লাখ পড়ছে বেসরকারি স্কুলে, আর সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ছে মাত্র সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল জানান, “জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া হয়। তবে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে মান উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ চালু রয়েছে।”
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৫০ বছরে সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। এ সময়ে বেসরকারি স্কুল বেড়েছে ১২ হাজারের বেশি, কিন্তু সরকারি বেড়েছে মাত্র ৪৯৬টি। ফলে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সীমিত থাকায় মাধ্যমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন

