শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ত্রিভুজ প্রেমের জেরে হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই: ডিএমপি

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম
মাহির ও তার বন্ধু ফারদিন আহমেদ আইলান
expand
মাহির ও তার বন্ধু ফারদিন আহমেদ আইলান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

তদন্তে জানা গেছে, এটি সম্পূর্ণরূপে ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতা থেকে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ড; এতে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস.এন. মো. নজরুল ইসলাম পিপিএম।

মৃত জোবায়েদ হোসেন (২৫) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

তিনি ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বংশাল থানার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নূরবক্স লেনের রওশন ভিলায় গিয়ে ছাত্রী বারজিস শাবনাম বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতে যান। কিছুক্ষণ পর ভবনের সিঁড়িতে তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

তদন্তে জানা গেছে, জোবায়েদ দীর্ঘ এক বছর ধরে বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতেন, এবং এই সময়ের মধ্যে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

কিন্তু বর্ষার সঙ্গে আগে থেকেই মো. মাহির রহমান নামে এক তরুণের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। মাহির একসময় বর্ষার বাসায় ভাড়া থাকতেন, ফলে তাদের পরিচয় শৈশব থেকেই।

সময়ের সঙ্গে বর্ষা জোবায়েদের প্রতিও আকৃষ্ট হন। এতে মাহির ও বর্ষার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

বর্ষা মাহিরকে বলেন, জোবায়েদ থাকলে আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারব না। এরপর থেকেই দুজন মিলে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।

পুলিশের ভাষ্যমতে, ২৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মাহির ও বর্ষা হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে। ১৯ অক্টোবর বিকেলে যখন জোবায়েদ পড়াতে আসেন, তখন মাহির ও তার বন্ধু ফারদিন আহমেদ আইলান আগেই গলিতে অবস্থান নেয়।

জোবায়েদকে দেখে তারা তার সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং বর্ষাকে ছেড়ে যেতে বলে। কিন্তু জোবায়েদ রাজি না হলে মাহির ধারালো ছুরি দিয়ে তার গলার ডান পাশে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, দুই বন্ধু মিলে আগে থেকেই দুটি ছুরি কিনেছিল, এবং পরিকল্পনা ছিল আইলান পিছন থেকে আঘাত করবে। তবে শেষ পর্যন্ত মাহিরই ছুরি চালায়।

তদন্তে উঠে এসেছে, হত্যার নেপথ্যে মূল ভূমিকা ছিল বর্ষার। গলা কাটা অবস্থায় জোবায়েদ রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে দুইতলায় গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেন এবং সেখান থেকে তৃতীয় তলায় ওঠেন।

সেখানে তিনি বর্ষার কাছে সাহায্য চান এবং বলেন, আমাকে বাঁচাও। কিন্তু বর্ষা কোনো সহায়তা না করে বলেন, তুমি না মরলে আমি মাহিরের হব না। এরপর জোবায়েদ সিঁড়ির মাঝপথে পড়ে মারা যান।

এই ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে—বর্ষা, মাহির ও ফারদিন আহমেদ আইলান। মাহিরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতে হয়; পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগের পর তাকে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তে এখন পর্যন্ত মাহির বা বর্ষার পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এদিকে, কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছিলেন যে বংশাল থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) বর্ষাকে সহায়তা করেছেন।

ডিএমপি জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কারও ব্যক্তিগত অনৈতিক ভূমিকা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, এটি রাজনৈতিক কোনো ঘটনা নয়, বরং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে সংঘটিত একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তদন্তে পাওয়া সব তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন