

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকা এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলির ঘটনায় একজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের তথ্যমতে, ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ, যিনি দাউদ খান নামেও পরিচিত। তাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ফয়সাল করিম অতীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি একজন সদস্য ছিলেন। তার পূর্ণ নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে তার উপস্থিতির একাধিক ছবি পাওয়া গেছে।
এসব ছবিতে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা ব্যক্তির চেহারার মিল থাকায় তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং একাধিক গণমাধ্যমে আলোচনা ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এরই মধ্যে শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ডিএমপি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়েছে।
পাশাপাশি, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় অভিযুক্তকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে একটি প্রোফাইল রয়েছে।
সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য (রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কমিটি) ফয়সাল করিম দাউদ খান একই ব্যক্তি।
তার নাম আলোচনায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-৮ আসনে ওসমান হাদির গণসংযোগ কর্মসূচি এবং বাংলামোটরে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের বিভিন্ন আড্ডায় তার অংশগ্রহণের ছবিও ভাইরাল হয়েছে।
এ থেকে অনেকেই ধারণা করছেন, তিনি কিছুদিন ধরেই ওসমান হাদির গতিবিধি অনুসরণ করছিলেন।
এ ছাড়া ফয়সাল করিমের বিরুদ্ধে অতীতেও একটি গুরুতর মামলার তথ্য রয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় একটি স্কুল ভবনের অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আদাবর থানায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম। মামলার পর ৭ নভেম্বর র্যাব তাকে আদাবর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
সে সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, তিনটি মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ওই মামলায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। পরে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের পর গত ১২ আগস্ট হাইকোর্ট নতুন করে এক বছরের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থাতেই এবার তার বিরুদ্ধে ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া একজন ব্যক্তি কীভাবে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে জামিন পেলেন-এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ও আলোচনা চলছে।
মন্তব্য করুন

