মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘুষ দাবি করা সুপার অনুপস্থিত, তালা ভেঙ্গে পরীক্ষা নিলেন ম্যাজিস্ট্রেট

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ পিএম
উল্লাপাড়ার বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার
expand
উল্লাপাড়ার বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার

দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে অভিযুক্ত উল্লাপাড়ার বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপারের অনুপুস্থিতিতে সোমবার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার রিমা প্রতিষ্ঠানের আলমারির তালা ভেঙ্গে প্রশ্নপত্র বের করে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন।

অভিযুক্ত সুপার আব্দুস সামাদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা মেলায় বিনা অনুমতিতে ৩দিন ধরে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি গত ২০ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর পর তার অফিস কক্ষের প্রশ্নপত্র সংরক্ষণের আলমারিতে তালা দিয়ে কাউকে কিছু না বলে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। এরপরে তিনি আর মাদ্রাসায় ফিরে আসেননি।

এতে গত রোববারের সকল পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষকগণ উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল কাদের বিশ্বাস জানান, এই মাদ্রাসায় এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে ২০২৩ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক মোমেনা খাতুনকে প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সময় সুপার আব্দুস সামাদ তার নিকট থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি এ দাবি না মেটানোর কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে সুপার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে আসছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে বিষয়টি নিয়ে মোমেনা খাতুন উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ করায় সুপার মোমেনা খাতুনকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি (আব্দুল কাদের বিশ্বাস) প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে মোমেনা খাতুনের অভিযোগ এবং আরও বেশ কিছু অনিয়মের সত্যতা পান। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে জানান। এরপর শিক্ষা বোর্ড থেকে পূর্বের পরিচালনা কমিটি কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে দেন।

১৭ নভেম্বর-২০২৫ তারিখে দেওয়া নতুন কমিটিতে পূর্বে সভাপতি কথিত সুপারের স্ত্রী নাছিমা আক্তারকে বাদ দিয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপাতির দায়িত্ব প্রদান করেন। নতুন কমিটিতে পূর্বের সভাপতি ছাড়া অপর সকল সদস্যদেরকে বহাল রাখেন।

এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন গত সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেবার পর সুপার আব্দুস সামাদ গত ২০ নভেম্বের তার কক্ষের প্রশ্নপত্রের আলমারিতে তালা দিয়ে তিনি কোন রকম ছুটি না নিয়ে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। গত রোববার (২৩ নভেম্বর) প্রশ্নপত্র বের করতে না পারায় শিক্ষকগণ বিনায়েকপুর মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার রিমা মাদ্রাসায় গিয়ে উপস্থিত শিক্ষক ও স্থানীয় সুধিজনদেরকে ডেকে তাদের সামনে কথিত প্রশ্নপত্রের আলমারির তালা ভেঙ্গে সকল প্রশ্নপত্র বের করেন এবং পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন।

বর্তমানে মাদ্রাসার সহকারী সুপার আলমগীর কবিরকে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাদের বিশ্বাস আরও জানান, ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার। এছাড়া স্কুলের নাইট গার্ড ও আরও কয়েকজন শিক্ষক সুপারের স্বজন হওয়ায় সামাদ নিজের খেয়াল খুশি মতো মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে এই সুপারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

উল্লাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার রিমা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সোমবার সকালে বিনায়েকপুর মাদ্রাসায় গিয়ে অফিস কক্ষে রক্ষিত বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের আলমারির তালা ভেঙ্গে মাদ্রাসায় বন্ধ থাকা বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করেন।

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার সভাপতি আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, তিনি দ্রুত পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে বিধি মোতাবেক উক্ত মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

এ ব্যাপারে বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সামাদকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন