নেত্রকোনায় গারোদের ওয়ানগালা উৎসব

নেত্রকোণার গারো পাহাড়ি অঞ্চল দূর্গাপুর-কলমাকান্দায় পূজা-অর্চনা, নৃত্য-গীত ও বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী উদযাপিত হলো গারো সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ফসল উৎসব ‘ওয়ানগালা’।

বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পী ও দর্শনার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসবস্থল পরিণত হয় এক আনন্দঘন মিলনমেলায়। উৎসবে হাজংসহ স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপস্থিতিতে সম্প্রীতির চিরায়ত সুর আরও দ্যুতিময় হয়ে ওঠে।

বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির আয়োজনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলমাকান্দার পাঁচগাঁও গ্রামের মাঠে শুরু হওয়া এই ঐতিহ্যবাহী ‘ফিফটি ড্রামস ওয়ানগালা’ উৎসব শেষ হয় শুক্রবার রাতে। ‘থক্কা’ ও নতুন শস্য উৎসর্গের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতা। গারো জনজাতির নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নিজস্ব বাদ্য-বাজনায় অতিথিদের বরণ করেন।

শুক্রবার দিনজুড়ে নিজস্ব লোকগীতি, নাচ ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ৫০টি ড্রামস নিয়ে ১০০ শিল্পীর পরিবেশনা উৎসবে ভিন্নমাত্রার আমেজ এনে দেয়। উৎসবমঞ্চে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিলসহ বিশিষ্টরা।

বক্তারা বলেন, গারো সমাজে ফসলদেবতা ‘মিশি সালজং’-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ওয়ানগালা উৎসব পালিত হয়। মিশি সালজং পৃথিবীতে প্রথম শস্য দিলেন -এমন আস্থার ভিত্তিতে প্রতি বছর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেন গারো জনগোষ্ঠী।

উৎসবে অংশ নেওয়া গারো সম্প্রদায়ের মানুষরা বলেন, ওয়ানগালা আমাদের আত্মপরিচয়। আমাদের শেকড়, আমাদের সংস্কৃতি। এই দিনে আমরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে আনন্দ ভাগ করে নিই। বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক কবি পরাগ রিছিল বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই মিলন আমাদের জাতিগত ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করে।

জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান বলেন, ওয়ানগালা নেত্রকোণার এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য। এই উৎসব সম্প্রীতির যে বার্তা দেয়, তা সারা দেশের জন্য অনুকরণীয়।

দুই দিনের আয়োজনে পাহাড়ি জনপদে সৃষ্টি হয় রঙ-বেরঙের উৎসব পরিবেশ। গারো, হাজং, বাঙালি—সব সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণে নেত্রকোণার ওয়ানগালা উৎসব হয়ে ওঠে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির মহামিলনমেলা।