মঙ্গলবার
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সন্তানের স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শিশু শাহাদাত

মাহবুব হোসেন রনি, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
রায়পুরে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে প্রশাসনের দ্বারস্থ শিশু সন্তান শাহাদাত ও তার মা। ছবি: এনপিবি
expand
রায়পুরে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে প্রশাসনের দ্বারস্থ শিশু সন্তান শাহাদাত ও তার মা। ছবি: এনপিবি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নিজের সন্তানের স্বীকৃতি ও ন্যায্য অধিকার পেতে আদালত ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এক অসহায় মা শাহীনুর বেগম ও তার শিশু পুত্র শাহাদাত হোসেন।

দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করেও এখনও মেলেনি সন্তানের পিতার স্বীকৃতি ও প্রাপ্য অধিকার।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শাহীনুর বেগম বাদী হয়ে রায়পুর পৌরসভার নতুনবাজার এলাকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্বাস উদ্দীন রতনকে আসামি করে নতুন একটি মামলা দায়ের করেছেন।

জেলা জজ আদালতের বিচারক মো. শাহীন উদ্দীন আপিল মামলা গ্রহণ করে আগামী ২৬ নভেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন।

বাদী শাহীনুর আক্তার রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের বংশীব্রীজ এলাকার আইয়ুব আলীর মেয়ে। অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন নতুনবাজার এলাকার মৃত আবদুল লতিফ ভুঁইয়ার ছেলে এবং কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের ৩ মার্চ মাত্র ১০ বছর বয়সে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে শাহীনুরের বাল্যবিয়ে হয়। দুই মাস পর দাম্পত্য কলহের কারণে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। পরে ২০০২ সালে তিনি আব্বাস উদ্দীন রতনের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। ওই সময় থেকেই রতন তার প্রতি কুদৃষ্টি দেয় এবং এক পর্যায়ে গোপনে নতুনবাজার জামে মসজিদের ইমামকে দিয়ে শাহীনুরকে বিয়ে করে। তবে কৌশলে কাবিননামা সম্পন্ন করেননি তিনি।

এরপর শাহীনুর গর্ভবতী হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তার নাম শাহাদাৎ হোসেন (বর্তমান বয়স ১১ বছর)। কিন্তু কাবিননামা না থাকায় রতন সন্তান ও স্ত্রী হিসেবে শাহীনুরকে অস্বীকার করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

পরে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর শাহীনুর রায়পুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন। আদালত ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে রতন চাপ প্রয়োগ করে মামলা প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হয়। তখন কাবিনের দাবিতে শাহীনুরকে ৩ লাখ টাকা প্রদান ও সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ মাসিক ৫ হাজার টাকা দেয়ার আশ্বাস দেন রতন। কিন্তু পরে তিনি আর কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেননি।

বর্তমানে শাহীনুর সন্তানের পিতৃত্ব ও ভরণপোষণের ন্যায্য দাবিতে আবারও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারী বলেন, প্রতারণা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে পূর্বের মামলাটি প্রত্যাহার করানো হয়েছিল। পারিবারিক আদালতে মামলাটি কাবিননামা না থাকায় রিজেক্ট হয়, তাই আমরা জেলা জজ আদালতে আপিল করেছি। ডিএনএ টেস্ট হলেই সত্য উদ্ঘাটন হবে।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত আব্বাস উদ্দীন রতন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শাহীনুর আমার বাসার গৃহকর্মী ছিলেন। একটি কুচক্রী মহল আমাকে হয়রানি করতে তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করাচ্ছে। আমি নির্দোষ আবারও আদালতে প্রমাণ করব।

জানা গেছে, শিশুটি জন্মের পর প্রতারণামূলকভাবে শাহাদাতের টিকা কার্ডে অন্য ব্যক্তির নাম পিতা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রতন। পরে শাহীনুর বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সংশোধন করান।

এখন ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় মা ও শিশু শাহাদাৎ আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতি ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার আশায়।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন