

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে প্রশাসনের অভিযান যেন এক প্রহসনে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫১টি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে সকালে অভিযান চললেও, রহস্যজনক কারণে বিকেলেই তা আবার পুরোদমে চালু হচ্ছে।
এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এবং তারা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চলা ক্ষমতাধর ইটভাটা মালিকদের অদৃশ্য শক্তির কাছে উপজেলা প্রশাসন কার্যত ব্যর্থ বলে মনে করছেন।
"এ যেন চোর-পুলিশ খেলা, সকালে ভাঙা আর বিকেলে তা আবার পুরোদমে চালু।"
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রামগতি ও কমলনগরে মোট ৫১টি ইটভাটার মধ্যে ৪৯টিই অবৈধ। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এই ভাটাগুলো ফসলি জমি গিলে খেয়ে চলছে। সর্বশেষ অভিযানেও কয়েকটি ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ জরিমানা করা হয়, কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সেগুলো আবার চালু হচ্ছে।
বারবার অভিযান সত্ত্বেও অবৈধ ইটভাটাগুলো কীভাবে মাথা উঁচু করে চলছে, সেই প্রশ্ন এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে। এই ভাটাগুলোর মালিকদের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটা মালিকদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসন নতজানু। ফলে আদালতের নির্দেশও কার্যকর হচ্ছে না।
দু:খের বিষয়, এতো কিছুর পরেও এখন পর্যন্ত একজন ভাটা মালিকেরও জেল হয়নি। কেবলমাত্র জরিমানা দিয়েই তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন।
উদ্বেগজনকভাবে, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা না নেওয়ায় চলতি বছর আরও দুটি অবৈধ ভাটা তৈরি হয়েছে।
রামগতির বিশাল অংশ মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পরেও বাকি থাকা ফসলি জমি এবং জনবসতি এলাকায় এই অবৈধ ইটভাটাগুলো পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ইট তৈরি এবং দেশীয় গাছের গুঁড়ি ও কাঠ পোড়ানোর কারণে একদিকে যেমন কৃষি জমির উর্বরতা কমছে, অন্যদিকে বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী উপকূলবাসীর আকুতি, উপকূলকে নিয়ে কেউ তামাশা করবেন না। এ উপকূলের অবহেলিত মানুষকে ইটভাটার নগরী থেকে উদ্ধার করুন।
যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার কথা বলছেন এবং অভিযান অব্যাহত রেখেছেন, তবুও অবৈধ ভাটাগুলো পুনরায় চালু হওয়ায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, জরিমানা বা সাময়িক বন্ধ নয়, এবার অবৈধ ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোরতম ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
উপকূলের পরিবেশ রক্ষায় এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে শক্তিশালী অভিযান চালিয়ে এই অবৈধ ইটভাটার 'চোর-পুলিশ খেলা'র অবসান ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মন্তব্য করুন
