শনিবার
২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমরা ৮ দলের না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই: জামায়াত আমির

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৪ পিএম
৮ দলের সমাবেশে জামায়াত আমির
expand
৮ দলের সমাবেশে জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাবেদারি নয়—স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।”

সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্দোলনরত ৮ দলের খুলনা মহানগরীর উদ্যোগে নগরীর ঐতিহাসিক বাবরী চত্বরে (শিববাড়ী মোড়) খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন— বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)–র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ডা. হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন।

দুপুর ১২টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগর সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিনের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন— মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা শোয়াইব হোসেন, মুফতি মোস্তফা কামাল, মাস্টার এম. এ. মজিদ, মুফতি শরীফ সাঈদুর রহমান, মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, মাওলানা এমরান হুসাইন, উপাধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম মুকুল, মাওলানা মো. রেজাউল করিম, অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, মুফতি আমানুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান, মুফতি ওলিউল্লাহ মাহমুদ, মুফতি আব্দুল কাইয়ুম জোমাদ্দার, এফ. এম. হারুন অর রশীদ, মাওলানা এমদাদুল হক, মো. নিজাম উদ্দীন অমিত, হাফেজ মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম, মুফতি ইব্রাহিম খলিল, মো. জাকির হোসেন খান, অ্যাডভোকেট মো. হানিফ উদ্দিন, মুকাররম বিল্লাহ আনসারী, ফজলুল হক ফাহাদ, মোমিনুল ইসলাম নাসির, আরাফাত হোসেন মিলন, ইউসুফ ফকির, মো. ফরহাদ মোল্লা প্রমুখ।

কুরআন তিলাওয়াত করেন ক্বারী ইকরামুল কাবির। এছাড়া প্রেরণা সাহিত্য সংসদ খুলনার আব্দুল্লাহ আল কাফি এবং নবদান সাংস্কৃতিক সংগঠনের সিনিয়র পরিচালক নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে শিল্পীরা ইসলামী গান পরিবেশন করেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, “৫ আগস্টের বিপ্লবের পরদিন থেকেই একটি গোষ্ঠী ক্ষমতার প্রভাব দেখানোর জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অরাজকতা অব্যাহত আছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষ বলছে—আগে ভালো ছিলাম না, এখন আরও খারাপ আছি।” তিনি দাবি করেন—এ সময় কোনো ইসলামি দলের গায়ে চাঁদাবাজির তকমা লাগেনি।

৩৫ বছর বা তার নিচে বয়স যাদের, যারা বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি—তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের ভোট নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে চাইলে আমরা তা হতে দেব না। সেদিন আমিও যুবক হয়ে তোমাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করব। তোমরা চাকরি করবে না, চাকরি দেবে।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে জনগণের লালিত স্বপ্ন অনেকাংশেই অপূর্ণ রয়ে গেছে। দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হলেও তা প্রকৃত উন্নয়ন নয়। ন্যায়বিচার ও সুশাসনই আসল। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দুই ধারায় চলছে—মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা। মাদ্রাসায় খুনখারাবি হয় না, অস্ত্রবাজি নেই—জ্ঞানচর্চা আছে। পক্ষান্তরে বিগত কয়েক দশকে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, মাদক, যৌন হয়রানি হয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন—“কিছু দল ও ব্যক্তি দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বানিয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক স্থানে আমাদের ব্যানার-প্যানা-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে জনগণ এখন আর পোস্টার দেখে ভোট দেয় না। তারা আমাদের ভালোবেসে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে। ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আরও একবার ৫ আগস্টের মতো ঘটবে।”

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “অনেকে বলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নই—কিন্তু আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বরং আপনারাই গণিত করে দেখেছেন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। সন্ত্রাস–গুন্ডামি–সেন্টার দখল করে এবার ক্ষমতায় বসতে পারবেন না।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মামুনুল হক বলেন— “জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ দুই ভাগে—৭২-এর বাকশালপন্থি আর ২০২৪-এর বিপ্লবপন্থি। জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পাক—জনগণের ভোটে গণভোট হোক।”

সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। ৮ দল ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজ থাকবে না।”

মুফতি মুসা বিন ইজহার বলেন, “যারা সংস্কারের বিরোধী—তাদের আগামী নির্বাচনে জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। ইসলামী সংসদ গঠন করা হবে।”

মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী বলেন, “রাষ্ট্রের সংবিধান হবে আল্লাহর কুরআন।”

ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেন, “জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। গণভোটে হ্যাঁ, ৮ দলে সিল মারুন।”

অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, “দেশদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আমরা একত্রিত। মানুষ দালালি নয়, মুক্তি চায়।”

সমাবেশে স্থানীয় নেতারা বলেন— “৮ দল একত্রে মাঠে থাকলে আগামী বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত শান্তির দেশ। হকের পথে জিহাদ অব্যাহত থাকবে। আগে গণভোট, তারপর নির্বাচন। পিআর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ৮ দলের ঐক্য ভাঙতে ষড়যন্ত্র চলছে—তবে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X