রবিবার
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেঁধে কুপিয়ে তরুণের হাত-পা বিচ্ছিন্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম
আবু সুফিয়ান (২৫)
expand
আবু সুফিয়ান (২৫)

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আবু সুফিয়ান (২৫) নামের এক তরুণকে বিদ্যুতের খুটিতে বেঁধে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এতে ওই তরুণের দুই হাত ও এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এছাড়া এই ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের ও জামায়াতে ইসলামীর দুই সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আহত যুবক আবু সুফিয়ান সিজু শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকার বাজিতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শাহ আলম (২২) ও তার ভাই আবদুর রাজ্জাক (২৩)। তাদের বাড়ি শ্যামপুর খোচপাড়া গ্রামে। রাজ্জাক একটি মাদরাসার শিক্ষক ও উমরপুর ঘাটে তার ওষুধের দোকান আছে। সেই দোকানের কাছেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা যায়। এছাড়া তারা দুইজন জামায়াতের কোনো পদ পদবিতে না থাকলেও দলটির মিছিল ও সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন বলেও স্থানীয়ভাবে জানা যায়

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুফিয়ানের ফুফাতো ভাইয়ের মেয়ের সঙ্গে পাশের এলাকার মোস্তাক নামে এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং প্রেমের সম্পর্ক করে তারা পালিয়ে বিয়েও করে। পরে মেয়ের বাবা (সুফিয়ানের ফুফাতো ভাই) মেয়েকে নাবালক দেখিয়ে আদালতে মামলা করে। এতে মেয়ে ও ছেলে উভয়কে জেলে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে মেয়ে তার বাবার কাছে ফিরে আসতে চাইলে আদালতের মাধ্যমে মেয়েকে জামিন দেওয়া হয়। এরপর থেকে সুফিয়ানের ভাতিজি তাদের বাড়িতেই থাকে। কিছু দিন থেকে সেই মোস্তাক আবারও সুফিয়ানের বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করে এবং একপর্যায়ে জোর করে মেয়েকে তুলে নিয়ে যেতে চায়।

এতে সুফিয়ান বাধা দেয় এবং মোস্তাকের সঙ্গে তার হাতাহাতি ও কথাকাটা কাটি হয়। পরে এলাকাবাসীর মাধ্যমে উভয়পক্ষকে থামানো হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে সুফিয়ান উমরপুর ঘাটের সাকোর ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময় অভিযুক্ত কয়েকজন মিলে তার দুই হাত ও পায়ে এলোপাতাড়িভাবে কোপ দেয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রের্ফাড করা হয়। বর্তমানে আবু সুফিয়ান সিজু রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিজু গণমাধ্যমকে জানান, পরিকল্পিতভাবে তাকে দেড় ঘণ্টা ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে কুপিয়েছে জামায়াত–শিবিরের কর্মীরা। তাদের মধ্যে বিষের দোকানদার আব্দুর রাজ্জাক, শরৎনগর গ্রামের আনোয়ার এবং চামা বাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আবু সাঈদের ভাই নূরসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সুফিয়ানের বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অপরদিকে আরও জানা যায়, আবু সুফিয়ান সিজু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং লিডার। তার নামে চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের চামা বাজারে শ্যামপুর ইউনিয়ন সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই গোপাল চন্দ্র মন্ডল বলেন, আবু সুফিয়ান সিজুর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। দুইজন আসামি গ্রেপ্তার আছে। এছাড়া আবু সুফিয়ান সিজুর নামেও থানায় একটি মামলা আছে বলেও জানান তিনি।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, আবু সুফিয়ান সিজুর ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না তা জানি না। তাদেরকে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা না। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X