রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকৃতির পালা বদলে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে খেজুর গাছ

এস এম মিজানুর রহমান মজনু, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭ এএম আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২০ পিএম
রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা
expand
রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা

শীতের আগমনে প্রকৃতির পালা বদলে আসে শীত, শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে আর ঘন কুয়াশার চাঁদরে ডাকা বার্তাসে তীব্র শীত। শীতের মিষ্টি রোদের সঙ্গে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে খেজুর গাছ।

সারাবছর অযত্নে পড়ে থাকা এসব গাছ এখন গাছিদের রস সংগ্রহকারীদের কাছে মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এখন গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাটা চলছে। ধারালো ব্যাঁকা দা গাছিদা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়। যাকে বলে চাঁচ দেওয়া হয় বলে।

এরপর নোলন স্থাপনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় খেজুরের রস, তা দিয়ে লোভনীয় গুড় তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে তারা গাছ পরিষ্কার, ছাল ছেঁটে দেওয়া ও বাঁশের নল তৈরি করে রাখছেন।

এদিকে, কৃষকরা বলছে, কেউ কেউ খেজুর গাছ কেটেও সংসার চলে এবং আমাদের এলাকায় বাপ দাদার অনেক পুরনো গাছ ছিল। এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। ফলে এখন তেমন খেজুর গাছ নেই বলেয় চলে।

কৃষকের তথ্য মতে, বেশির ভাগ গ্রাম অঞ্চলে এখন আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। ফলে এখন তেমন গাছ চোখে পড়ে না বলেয় চলে। তবে প্রভৃতি গ্রাম জুড়ে রয়েছে খেজুর গাছ। খেজুরের রস দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ দিয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকায় জমির আইল, রাস্তার পাশে ও বিলের ধারে বছরজুড়ে অযত্ন-অবহেলায় থাকা খেজুর গাছগুলোও যত্ন শুরু হয়েছে।

এসব গাছ থেকে শীতজুড়ে সুমিষ্টি রস পেতে সকাল-সন্ধ্যা এক গাছ থেকে অন্য গাছে ডাল কেটে পরিষ্কার করতে ছুটছেন গাছিরা। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন তারা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথা শুরু করেছেন।

শীত যত বাড়বে, খেজুর রসের মিষ্টিও ততই বাড়বে। শীতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ দিনের শুরুতে খেজুরের রস ও সুস্বাদু গুড়। বাড়িতে বাড়িতে খেজুুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা পায়েসসহ নাম না জানা হরেক রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম।

সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরীতে আবহমান কাল থেকে খেজুর গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ অঞ্চলে খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজ পুরোদমে এখন শুরু করেছে।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের আগা কাটা হয়। গাছের আগা কাটা শ্রমিকও সহজে গ্রামে পাওয়া যায়।

ফলে বাড়তি মজুরি নিয়ে খেজুর গাছ কাটান তারা। আর এ মৌসুমে পুরো চার মাস বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন তারা। এ মৌসুমে বেপারীরা ভালুকার বিভিন্ন বাজারে রস ও গুড়ের হাটে আসে তারা, এসব হাট-গুলোতে খেজুরের রস ও গুড় কিনে সারা দেশে সরবরাহ করে।

খেজুর গাছ কেটে আপনার সংসার চলে কি? প্রশ্ন করলে গাছি মনিরুল চৌধুরী এনপিবি নিউজকে জানান, কি করমু, জীবন তো বাঁচাতে হবে। এ মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ১শ খেজুর গাছ নিয়েছি। মৌসুমে প্রতি খেজুর গাছ থেকে দুই কেজি রস জ্বাল করে দিতে হবে কৃষককে। তারপর যা থাকে তা বাজারে বিক্রি করে যা টাকা পায় তা দিয়ে আমার সংসার চলে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X