শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডাক্তারদের হাতের লেখা স্পষ্ট করতে বললো আদালত

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম
ডাক্তারদের হাতের লেখা স্পষ্ট করতে বললো আদালত
expand
ডাক্তারদের হাতের লেখা স্পষ্ট করতে বললো আদালত

ডাক্তারদের হাতের লেখা এতটাই খারাপ হয় যে তা কেবলমাত্র ফার্মাসিস্টরাই পড়তে পারেন- এমন রসিকতা সারা বিশ্বেই। তবে সম্প্রতি এক আদেশে বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পেল।

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট বলেছে, ‘পাঠযোগ্য চিকিৎসা প্রেসক্রিপশন একটি মৌলিক অধিকার, কারণ এটি জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য তৈরি করতে পারে।’

এই নির্দেশনা আসে এক মামলায়, যেখানে অভিযোগ ছিল ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির। বিচারপতি জসব্রীত সিং পুরি অভিযুক্তের জামিন আবেদন শুনছিলেন। মামলার শুনানির সময় তিনি সরকারি চিকিৎসকের করা মেডিকো-লিগ্যাল রিপোর্ট দেখেন, যা এতটাই অস্পষ্ট ছিল যে এক অক্ষরও বোঝা যায়নি।

পরে রায়ে বিচারপতি লিখেছেন, ‘এটি আদালতের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে, কারণ রিপোর্টের একটি শব্দও পাঠযোগ্য ছিল না।’

বিচারপতি পুরি আরও মন্তব্য করেন, ‘যখন প্রযুক্তি ও কম্পিউটার সহজলভ্য, তখনও সরকারি ডাক্তাররা এমন প্রেসক্রিপশন লিখছেন যা কেউই পড়তে পারে না, হয়ত কয়েকজন কেমিস্ট ছাড়া।’

এর পর আদালত সরকারকে মেডিকেল কলেজে হাতের লেখার প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন চালুর নির্দেশ দিয়েছেন।

এ ছাড়া এর মধ্যে সব চিকিৎসককে প্রেসক্রিপশন স্পষ্টভাবে এবং বড় হাতের অক্ষরে লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতের এই আদেশ এমন এক মামলায় এসেছে, যার সঙ্গে লেখালেখির কোনো সম্পর্কই ছিল না। মামলাটি ছিল ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে।

বিচারপতি জসগুরুপ্রীত সিং পুরি এক নারীর আনা অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির জামিনের আবেদন শুনছিলেন।

ওই নারীর অভিযোগ ছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, ভুয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং তাকে যৌন নির্যাতন করেছেন।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্ক ছিল এবং টাকার বিবাদ থেকেই এই মামলা করা হয়েছে।

বিচারপতি পুরি বলেন, তিনি যখন ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনটি দেখেন, তখন লেখাটি তার কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়। প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন একজন সরকারি ডাক্তার।

তিনি তার আদেশে লেখেন, "এই লেখা আদালতের বিবেককে নাড়া দিয়েছে, কারণ একটি শব্দ বা অক্ষরও পড়ার মতো ছিল না।"

বিবিসি রায়ের একটি কপি দেখেছে, যেখানে ওই প্রতিবেদন এবং দুই পৃষ্ঠার একটি ব্যবস্থাপত্রও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ডাক্তারের লেখা অস্পষ্ট বা হিজিবিজি ।

বিচারপতি পুরি আরও লেখেন, "প্রযুক্তি ও কম্পিউটার যখন এত সহজলভ্য, তখনো সরকারি চিকিৎসকেরা হাতে এমন ব্যবস্থাপত্র লিখছেন, যা ওষুধের দোকানের বিক্রেতা ছাড়া হয়তো আর কেউই পড়তে পারে না—এটা খুবই হতাশাজনক।"

আদালত সরকারকে মেডিকেল কলেজের পাঠ্যসূচিতে হাতের লেখার ক্লাস অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র ব্যবস্থা চালু করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।

যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন সব ডাক্তারকে বড় হাতের অক্ষরে (ক্যাপিটাল লেটার) স্পষ্টভাবে ব্যবস্থাপত্র লিখতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি পুরি।

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) প্রেসিডেন্ট ড. দিলীপ ভানুশালী বিবিসিকে বলেন, তারা এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি।

তিনি বলেন, বড় শহরগুলোতে চিকিৎসকেরা এখন ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র ব্যবহার করছেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বা ছোট শহরগুলোতে স্পষ্ট ব্যবস্থাপত্র পাওয়া খুবই কঠিন।

তিনি আরও বলেন, "এটা সবারই জানা যে অনেক ডাক্তারের হাতের লেখা খারাপ। এর কারণ হলো, বেশিরভাগ চিকিৎসকই খুব ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর প্রচণ্ড চাপ থাকে।"

ড. দিলীপ যোগ করেন, "আমরা আমাদের সদস্যদের সরকারি নির্দেশনা মেনে বড় হাতের অক্ষরে ব্যবস্থাপত্র লিখতে সুপারিশ করেছি, যাতে রোগী ও বিক্রেতা উভয়েই তা পড়তে পারে। যে ডাক্তার দিনে সাতজন রোগী দেখেন, তার পক্ষে এটা করা সম্ভব। কিন্তু যিনি দিনে ৭০ জন রোগী দেখেন, তার জন্য এটা কঠিন।"

সূত্র: বিবিসি বাংলা

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন