শনিবার
২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩ আগস্ট শহীদ মিনারে শিবির, ছাত্রদল ও বামদের সঙ্গে আলোচনা করে এক দফা দিই

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম
এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৪ পিএম আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২১ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম
expand
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতনের এক দফার আলোচনা হয় বামপন্থি কয়েকটি ছাত্রসংগঠন ও ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের সঙ্গে। সাথে আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়করা ছিলো।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি পেশকালে এ কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ জবানবন্দির শুরুতে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন। যার মধ্যে ছিল ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং ২০২৩ সালে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামের ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠা করা। ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করা এবং বিভিন্ন অনিয়ম দূর করাই ছিল এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৫ জুলাই আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিই। একই দিন ছাত্রলীগ পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেয়। সেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তার এ ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয়, কারণ তারা আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে ছিলেন। হামলাকারীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক সৈকত এ হামলায় নেতৃত্ব দেন। তারা বাইরে থেকেও সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করেছিলেন। হামলায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

নাহিদ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা দেওয়াসহ অন্যান্য বিষয় তুলে ধরেন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রছাত্রীদের ওপরও তারা নির্যাতন চালায় এবং চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়। এ ছাড়া ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা ও চট্টগ্রামে ওয়াসিমসহ সারাদেশে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ কর্মসূচি চলে।

জবানবন্দিতে নাহিদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়ক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বামপন্থী কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করি। এক দফায় আমরা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই। এতে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করি।

পরদিন শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় জানিয়ে নাহিদ বলেন, ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সরকার কারফিউ জারি করে, দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। এরই মধ্যে আমরা জানতে পারি, মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করতে সরকার মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করবে। আমাদেরও হত্যা বা গুম করা হতে পারে। তাই মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনা হয়।

এনসিপি নেতা জানান, এ কর্মসূচি সফল করতে সমন্বয়কদের পক্ষে মাহফুজ আলম অন্যান্য ছাত্রসংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলেন। পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা নতুন সরকার গঠনের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দেন।

৫ আগস্ট সারাদেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, আমরা শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করি। কর্মসূচি বানচাল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় গুলি করে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী রাস্তা ছেড়ে দিলে আমরা শাহবাগে প্রবেশ করি। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমরা শুনতে পাই সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ ঢাকার প্রবেশমুখগুলো দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছে। শাহবাগ থেকে আমরা মিছিল নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হই। পথিমধ্যে জানতে পারি হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আরও শুনতে পাই ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X