শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাইয়ের নায়ক থেকে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম

আফরান জাফর আশপি
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২১ পিএম
expand
জুলাইয়ের নায়ক থেকে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম)।

তিনি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি। ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের মনোনয়নে তিনি ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হন।

জুলাই মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘সালমান’ ছদ্মনামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সাদিক কায়েম। ওই আন্দোলনের সময় তার ভূমিকা প্রথমে অজানা থাকলেও ৫ আগস্টের পর থেকে তার ভূমিকা ও তৎপরতা প্রকাশ পেতে শুরু করে। গণঅভ্যুত্থানের প্রায় ছয় মাস পর সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান একটি ফেসবুক পোস্টে সাদিকের ভূমিকার কথা লিখে তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় আনেন।

ডাকসু নির্বাচনে জয়ের পর থেকে সাদিক কায়েমকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। খাগড়াছড়ি শহরের বাজার এলাকার বাসিন্দা সাদিক কায়েম। বাবা একজন ব্যবসায়ী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। তার এক ভাই ও এক বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সাদিকের ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ‘সালমান’ ছদ্মনামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সাদিক। আন্দোলনের সম্মুখসারির সংগঠকদের আশ্রয় দেওয়া, বিচ্ছিন্ন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করা এবং গণমাধ্যমে নয় দফা দাবি পৌঁছে দেওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। সাদিক নিজে বলেছেন, তার সংগ্রাম কেবল জুলাইয়ের ৩৬ দিনের আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নয়। কৈশোর থেকেই তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়।

রাজনীতির পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদদের পরিবারের সঙ্গেও কাজ করছেন সাদিক। তাদের সঙ্গে দেখা করা, চিকিৎসার খোঁজখবর রাখা এবং চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন তিনি। শহীদদের স্মরণে ‘জুলাই শহীদ স্মারক’ও প্রকাশ করেছেন।

ছাত্রশিবিরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হন সাদিক। তখন থেকেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এই সময়ে শেখ হাসিনার ছাত্র সংগঠনের হাতে তার রুমমেট সাকিব নিহত হয়। ছাত্রশিবিরের আরেক কর্মী আবিদও সাদিকের ঘনিষ্ঠ ছিল। আবিদের চোখ উপড়ে ফেলে তাকে হত্যা করা হয়; এই স্মৃতি এখনও সাদিককে তাড়িয়ে বেড়ায়।

খাগড়াছড়ির বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে ২০১৪ সালে দাখিল এবং ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন সাদিক। দুটি পরীক্ষাতেই তিনি বোর্ড বৃত্তি পান। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। স্নাতক পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.৭৮। প্রথম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.৯৪ পেয়ে প্রথম হন তিনি। প্রথম বর্ষে সেলিমা এমাজউদ্দিন বৃত্তি, দ্বিতীয় বর্ষে মিতসুবিসি বৃত্তি এবং তৃতীয় বর্ষে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বৃত্তি পান সাদিক। এ ছাড়াও স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফলাফলের জন্য আরও তিন-চারটি বৃত্তি পান তিনি।

ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও যুক্ত ছিলেন সাদিক। স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ভায়োলেন্স এভরিহোয়্যার (সেইভ)-এর একজন ফ্যাসিলিটেটর ছিলেন তিনি, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভের জেনারেল সেক্রেটারিও ছিলেন। ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আন্দোলনে কো-অপারেশন করা, হলে কোনো শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী হলে তাকে উদ্ধার করাসহ নানামুখী এক্টিভিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন সাদিক।

সাদিক কায়েম ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। এছাড়া ফিলিস্তিন নিয়ে যতগুলো এক্টিভিজম হয়েছে, তাতেও সম্পৃক্ততার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন সাদিক কায়েম।

লেখক : সিনিয়র নার্স, বাংলাদেশ মেডিকেল

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন