

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শুধু দাম বা লোকেশন দেখে তাড়াহুড়ো করে চুক্তি করা বিপদের কারণ হতে পারে। দলিল সম্পাদন করলেই জমি পুরোপুরি নিজের হয়ে যায়-এই ধারণা ভুল।
জমি ক্রয়ের আগে প্রতিটি আইনি ও প্রশাসনিক দিক ভালোভাবে যাচাই না করলে প্রতারণা, মামলা-মোকদ্দমা কিংবা জমি হারানোর ঝুঁকি থেকেই যায়।
প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে বিক্রেতা আসল মালিক কি না। অনেক সময় দেখা যায়, অন্যের নামে থাকা জমি ভুয়া দলিল দেখিয়ে কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। পরে প্রকৃত মালিক এসে মামলা ঠুকে দেন, বিপাকে পড়েন ক্রেতা।
জমির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য বিক্রয় দলিল, খতিয়ান, ভূমি উন্নয়ন করের রশিদসহ সব দলিল খুঁটিয়ে দেখা জরুরি। সর্বশেষ দলিলের তথ্য আগের দলিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
বিশেষ করে, ভায়া দলিল (মূল দলিল) ও পরবর্তী দলিলের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ১৯৯০ সালে ৫৪০ নম্বর দলিলে জমি কিনে ২০২৩ সালে ৬২০ নম্বর দলিলে বিক্রি করেন, তবে ৫৪০ নম্বর দলিলই হবে ভায়া দলিল।
দলিল যাচাইয়ের সময় দাতা-গ্রহীতার নাম, ঠিকানা, মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, মোট জমির পরিমাণ ইত্যাদি ভালোভাবে মিলিয়ে দেখা জরুরি। খতিয়ানের তথ্য ও দলিলের মধ্যে কোনো অমিল থাকলে তা স্পষ্টভাবে খুঁজে বের করতে হবে। নামের বানানে ভুল থাকলে ভবিষ্যতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
নামজারি (মিউটেশন) হয়েছে কি না, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। নামজারি করা হলে নতুন খতিয়ানে জমির দাগ ও পরিমাণ আগের রেকর্ডের সঙ্গে মিল আছে কি না দেখতে হবে। কোনো দাগে জমির পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি সন্দেহজনক-কারণ অতিরিক্ত জমির মালিকানা দাবি করা যাবে না।
এছাড়া জমি সরকারি মালিকানার, অর্পিত সম্পত্তির বা মামলাযুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা আবশ্যক। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে জমি বিক্রি হলে মূল মালিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা এবং প্রয়োজনে তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
অনেকে ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তৈরি করে জমি বিক্রির চেষ্টা করে-এ ধরনের প্রতারণা রোধে দলিল অফিস ও স্থানীয় ভূমি কার্যালয়ে তথ্য যাচাই করতে হবে।
সবশেষে, স্থানীয় লোকজন ও পার্শ্ববর্তী জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা ভালো। কারণ, পার্শ্ববর্তী মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার হতে পারেন। আর তৃতীয় পক্ষ বা দালালের কথায় অন্ধভাবে বিশ্বাস করা মোটেও উচিত নয়।
জমি কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। তাই সময় নিয়ে, ধৈর্য ধরে, প্রতিটি দিক যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
মন্তব্য করুন
