

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ইতিহাসের অজস্র অধ্যায়ে এমন কিছু গল্প আছে, যেখানে এক ব্যক্তির জীবন পুরো একটি জাতির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার প্রতীক হয়ে ওঠে। তেমনই এক নাম উইলিয়াম ল্যানি-যিনি ইতিহাসে বেশি পরিচিত ‘কিং বিলি’ নামে। তিনি কোনো যুদ্ধের ময়দানে নিহত হননি, কিন্তু তাঁর জাতি-তাসমানিয়ার আদিবাসী পালাওয়া জনগোষ্ঠী-প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের নিষ্ঠুরতায়।
উইলিয়াম ল্যানি ছিলেন তাসমানিয়ার শেষ পূর্ণ রক্তের আদিবাসী পুরুষ, অর্থাৎ তাঁর বাবা-মা দুজনই স্থানীয় পালাওয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। তাঁর জীবনের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল তাঁর জাতির করুণ পরিণতির ইতিহাস।
১৮০৩ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশকারীরা যখন তাসমানিয়ায় আসে, তারা দ্বীপটিকে “জনশূন্য ভূমি” ঘোষণা করে দখল করে নেয়। এরপর শুরু হয় “কালো যুদ্ধ”-এক নির্মম গণহত্যা, যেখানে হাজার হাজার আদিবাসী পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং নারী-শিশুদের বন্দি করে পাঠানো হয় ফ্লিন্ডার্স দ্বীপে। ছোটবেলায় সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে কোনোভাবে বেঁচে যান ল্যানি।
সময় গড়াতে গড়াতে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর জাতি প্রায় ধ্বংসের পথে, আর পূর্ণ রক্তের একমাত্র পুরুষ হিসেবে তিনিই বেঁচে আছেন সেই বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জাতির শেষ প্রতিনিধি।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যক্ষ্মায় মারা যান উইলিয়াম ল্যানি। কিন্তু মৃত্যুর পরও তাঁর দেহকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। তথাকথিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে হোবার্টের মেডিকেল কলেজ ও স্থানীয় জাদুঘর তাঁর দেহ নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে। রাতে তাঁর খুলি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয় “গবেষণার উপকরণ” হিসেবে।
দীর্ঘ ১২২ বছর ধরে তাঁর দেহের অংশ ঘুরে বেড়ায় ইউরোপের নানা গবেষণাগারে। অবশেষে তাসমানিয়ার আদিবাসীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তাঁর দেহাবশেষ ফেরত আনা হয় নিজ মাটিতে।
সেই বছরই তাঁকে সমাহিত করা হয় তাসমানিয়ার মাটিতে-যেখান থেকে একসময় তাঁর জাতিকে নির্মূল করা হয়েছিল।
আজও ‘কিং বিলি’র নাম উচ্চারিত হয় ইতিহাসের এক বেদনাদায়ক অধ্যায়ের প্রতীক হিসেবে—যে গল্প মনে করিয়ে দেয়, সভ্যতার নামে উপনিবেশবাদ কতটা নির্মম হতে পারে।
মন্তব্য করুন
