শনিবার
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবিতে একই মঞ্চে ডাকসু, চাকসু ও রাকসুর নির্বাচিত ভিপিরা

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ইসলামি ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘নবীন বরণ অনুষ্ঠান
expand
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ইসলামি ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘নবীন বরণ অনুষ্ঠান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ইসলামি ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘নবীন বরণ–২০২৫’ অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে একত্রিত হয়েছেন ডাকসু, চাকসু ও রাকসুর নির্বাচিত সহ-সভাপতিরা (ভিপি)।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তারা শুভেচ্ছা ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নির্বাচিত ভিপিরা অতীতের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস, রাবির আন্দোলন-সংগ্রামের নানা স্মৃতি এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তারা নবীন শিক্ষার্থীদের সামনে সংগঠনগুলোর আদর্শ, নীতি, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও ভবিষ্যৎ ভূমিকার কথা তুলে ধরে সৎ, ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন গড়তে আহ্বান জানান। বক্তৃতায় ১৯৬৯ ও ১৯৮২ সালের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণ, দমন-পীড়নের অভিজ্ঞতা, বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ এবং শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার গুরুত্ব উঠে আসে।

ছাত্রশিবিরের ইতিহাস স্মরণ করে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাবিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, কিন্তু সেই অনুষ্ঠানকে নষ্ট করতে সম্মিলিত হামলা চালানো হয়। সেই আক্রমণে শহীদ হন আমাদের ছাব্বির ভাই। এছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন প্রক্টর শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের অবদানও তিনি গভীরভাবে স্মরণ করেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও রাবির সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ; কলেজ জীবন থেকেই নিয়মিত আসা-যাওয়ার কারণে ক্যাম্পাসটি তার কাছে খুব পরিচিত ছিল। তিনি বলেন, রাজশাহী কলেজে কয়েকজন ছাত্রশিবির নেতাকে চিনলে তার মধ্যে আমাকেও চিনতো ছাত্রলীগ।

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন পরিবেশ আশা করেছিলাম, কিন্তু রাষ্ট্র বা ক্যাম্পাস—কোথাও আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিবেশ গড়ে ওঠেনি।” তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই পরবর্তীতে বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচন চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরং নানা বাধা সৃষ্টি করছে—এমন অভিযোগও করেন তিনি। তার মতে, শুধু প্রশাসন নয়, রাষ্ট্রও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের কাজের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

এ সময় রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল, কিন্তু সেদিন কী ঘটেছিল তা অনেকেই জানেন। তিনি বলেন, সেই আক্রমণ এখনো আবেগতাড়িত করে। অনুষ্ঠানের পর চারজন ভাই আর ঘরে ফিরতে পারেননি—সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই ও জব্বার ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও স্মরণীয়। সেই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছর ১১ মার্চ শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের ওপর সংঘটিত জুলুমের ইতিহাস।

তিনি আরও বলেন, “আজ দিনটি বদলে গেছে। যে নবীনবরণ করতে গিয়ে আমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিলেন, আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে পারছি—এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।” তিনি জানান, ১৯৮২ সালের পর এবারই প্রথম ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় পরিসরে নবীনবরণ আয়োজন করা হয়েছে। আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও সেখানে ছাত্রীদের রাখা সম্ভব হয়নি, কিন্তু এবার তা সম্ভব হয়েছে—যা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।

এ সময় ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, “খুনি হাসিনা ছাত্রশিবিরের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল, এমনকি শিবিরকে নিষিদ্ধও করেছিল। কিন্তু শিবির থেকেছে মানুষের হৃদয়ে, আর হাসিনা পালিয়ে গেছে দিল্লিতে। ছাত্রশিবির সবসময় ন্যায় ও আজাদীর পক্ষে লড়েছে এবং লড়বে। শিবির যদি কোনো ভুল করে তবে আপনারা প্রতিবাদ করবেন। সব ছাত্র সংগঠনকে বলবো—ইসলামী ছাত্রশিবির যে নতুন ধারার রাজনীতি করছে তা অনুসরণ করুন।”

আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই নবীনবরণ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করবো—খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং তার ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। তার সহযোগীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার বিভাগ, সচিবালয় ও আইন বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো সক্রিয়—এদের প্রতিহত করতে হবে। এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই; তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তারা—যারা বাংলাদেশপন্থী।”

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হয়নি, কারণ এই ব্যবস্থা ব্রিটিশ ও ভারতীয় প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তৈরি।”

রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকে রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের গল্প শুনে বড় হয়েছি। ইতিহাসের বর্বর মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছিল রাবি শাখা। ফ্যাসিবাদী শাসনে এই ক্যাম্পাস ছিল না—গণরুম, গেস্টরুমের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চলতো। মৌলিক অধিকার হরণ করা হতো। ইসলাম চর্চা করতে পারতো না কেউ; করলে ট্যাগিং ও নির্যাতনের শিকার হতো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এক হতে দিত না—ঐক্যবদ্ধ হতে গেলেই ট্যাগিং করা হতো। আমি নবীনদের বলবো—তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই দেশে আর কোনো নব্য ফ্যাসিস্ট জন্মাতে পারবে না। তোমাদেরকে বিশ্বনেতৃত্বের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে হবে।”

অনুষ্ঠানে তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে আরও বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, আমন্ত্রিত অতিথি রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন