

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তেজগাঁও কলেজের ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য পাচার এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ চুরির চেষ্টার অভিযোগে তীব্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি কলেজের ওয়েবসাইট হালনাগাদের পরপরই শিক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে প্রতারক চক্রের হানা দেওয়ায় কলেজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তথাকথিত কলেজ প্রেস ক্লাবের পরিচালনা পরিষদের সদস্য মেহেদী হাসান। যার বিরুদ্ধে তথ্য পাচার ও অর্থ চুরির অভিযোগ ওঠার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদের ওয়েবসাইট থেকে তার ছবি সরিয়ে নিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, মেহেদী হাসান দীর্ঘ ১৭ বছরের স্বৈরাচার নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দোসর এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও সম্প্রতি সাকিব হত্যাকান্ডে তার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, পূর্বে সে ছাত্রলীগ করলেও এখন ছাত্রদলের ছায়াতলে এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত। অভিযোগের তীর তার সহযোগী ময়ূখ মাহবুব ও মোঃ শেখ রিয়াদের দিকেও রয়েছে, যারা ওয়েবসাইটের ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে সুপরিচিত ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আমি আমার নিজের একাউন্ট থেকে পেমেন্ট করেছি। তবুও আমার নাম্বারে প্রতারকের কল এসেছে। তাহলে প্রতারক নিশ্চয়ই আমাদের কলেজের কেউ কিংবা ওয়েবসাইট ডেভেলপাররাই হবে। কারণ গত ১৭ বছরের মধ্যে যখন ডিজিটাল পেমেন্ট এর ইতিহাসে এখন অব্দি এমনটা হয় নি।
আমার জানা মতে, বাংলাদেশের অন্য কোন কলেজেও এমন ঘটনা ঘটে নি। তিনি আরো প্রশ্ন তোলেন, নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট করলেও কেন কল ও ওটিপি মেসেজ আসে? এজেন্ট ব্যবসায়ীরা ফোন নম্বর পেল কিভাবে? ময়ুখ দিয়ে আসলো নাকি মেহেদী! ব্যাপারটা হাস্যকর।
শিক্ষার্থীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন— তেজগাঁও কলেজের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট কি তবে ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থ? ওয়েবসাইট আপডেটের পরপরই এমন ঘটনা ঘটায়, আপডেটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কেউ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত নম্বর পেল কীভাবে?
'তেকসাস টিম' এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধান শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, তাদের তথ্য এখন হুমকির মুখে এবং উন্মুক্তভাবে যে পাচার হচ্ছে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থীর টাকা হাতিয়েও নিয়েছে এই প্রতারক চক্র।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ নভেম্বর জারি করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পিন নম্বর/ওটিপি কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং দাবি করে যে এই প্রতারক চক্রের সাথে কলেজের কোনো শিক্ষক/স্টাফের সম্পর্ক নেই। কিন্তু ততক্ষণে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
কলেজ প্রতিষ্ঠান প্রধান এই অভিযোগের বিপরীতে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বলেছেন, আমাদের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি সম্ভব নয়। প্রতারণার উৎস বাহিরের অনভিজ্ঞ চ্যানেলগুলো। শিক্ষার্থীরা যে অনলাইন কপি বা বিকাশ সেবার দোকানগুলো ব্যবহার করে, সেখান থেকেই তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা বেশি।
তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তাদের দাবি, এই চক্র বহিরাগত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাদের মতে, এই কাজ কলেজের অভ্যন্তরীণ কেউ বা ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণকারী গ্রুপ নাকি নগদ/ব্যাংকের কেউ করেছে— তা কলেজ প্রশাসনের ভাল জানার কথা।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, কলেজ ছাত্রদলের বানানো অবৈধ একপাক্ষিক মিডিয়া সেল 'তেকপক' এই ইস্যুতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের একটি ফটো কার্ড বানিয়ে নিজেদের দোষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট ব্যবসায়ীদের দিকে ঠেলছে। অথচ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে পেমেন্ট করলেও ফোন নম্বরে কল ও ওটিপি মেসেজ আসছে, যা অভ্যন্তরীণ যোগসাজশের দিকে ইঙ্গিত করে।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজ সংক্রান্ত সকল ফি মোবাইল ব্যাংকিং রকেট/নগদের মাধ্যমে পেমেন্ট করলে সেখানে একটা পেমেন্ট ফি কাটা হয়। আর সে পেমেন্ট ফি এর থেকে ৭% কমিশন এই কলেজ প্রশাসন পায়। আমি প্রতি মাসে যদি ১৫০০/- টাকা বেতন পরিশোধ করি তাহলে ২৩/- টাকা অর্থাৎ মোট ১৫২৩/- টাকা ফি কাটে। অর্থাৎ আমি একজম শিক্ষার্থী হিসেবে কলেজের ফিও দিচ্ছি, সাথে অতিরিক্ত পেমেন্ট ফিও দিচ্ছি। অর্থাৎ পেমেন্ট ফি এর নামে শিক্ষার্থীদের গলাও কাটা হচ্ছে আবার আমাদের তথ্যও সুরক্ষিত থাকছে না আর অর্থও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে আমাদেরই!
পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ প্রশাসন ইতোমধ্যে জরুরি মিটিংয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও সংশ্লিষ্ট সব অফিসকে সতর্ক করেছে। প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কারো সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলেজ প্রশাসন আরো জানিয়েছে, প্রাথমিক প্রমাণ মেলায় মেহেদীর ছবি ওয়েবসাইট থেকে অপসারণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং খুব শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
