

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ফেসবুকে ভিউ বাড়ানোর জন্য রামদা হাতে ভিডিও করে তা নিজের প্রোফাইলে আপলোড করেছেন এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়ভাবে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের চান্দের সাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জানা গেছে, ওই শিক্ষক অতীতেও বিদ্যালয়ে অনিয়মিত উপস্থিতি ও মাদকাসক্তির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাহাত হোসেন ওরফে শাকিল গত রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে রামদা হাতে ধারণ করা একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমিও প্রস্তুত আছি এবং ঠাণ্ডা মাথায় কথাগুলো বলছি। যেখানে আজ আব্বাই নেই, সেখানে মাথা রাখার ঠাঁই না থাকাটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ ভরসা।”
ভিডিওটি প্রকাশের পর মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনদের অনেকে শিক্ষকের এমন ভিডিওকে ‘অপেশাদার’ ও ‘ভীতিকর’ হিসেবে সমালোচনা করেন। সমালোচনা শুরু হলে কিছুক্ষণ পরেই ভিডিওটি মুছে দেন তিনি।
রাহাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর ব্যবহৃত ফোন নম্বরে সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে একই নম্বরে কল দিলে ফোনটি রিসিভ করেন তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার।
তিনি বলেন, "ফেসবুক মনিটাইজেশন পেলেও সে লাইক-কমেন্ট পাচ্ছিল না। তাই মজা করেই ভিডিওটি করেছিল। সমালোচনা শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে পোস্ট ডিলিট করে দেয়। ঘটনাটি আবেগের বশে করেছে রাহাত। দয়া করে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করছি।”
এ বিষয়ে চান্দের সাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, “রাহাত হোসেন আমাদের বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। গত বৃহস্পতিবার তিনি ছুটি নিয়েছেন। কেন এমন ভিডিও করলেন, তা জানা নেই।”
গৌরীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে তাঁকে শোকজ করেছি। শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে। তিনি ইচ্ছেমতো এমন ভিডিও দিতে পারেন না। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আমীন পাপ্পা বলেন, “ঘটনাটি জানার পরই শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, প্রমাণ মিললে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রাহাত হোসেনের বাড়ি গৌরীপুর পৌর শহরের নয়াপাড়া এলাকায়। তিনি ২০১৩ সালে চান্দের সাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। চাকরির প্রথম দিকে তিনি নিয়মিত ছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন।
অভিযোগ ছিল, তিনি মাঝে মাঝে একদিন বিদ্যালয়ে এসে হাজিরাখাতায় কয়েক দিনের অগ্রিম স্বাক্ষর করে চলে যেতেন। এমনকি বিদ্যালয়ে গেলেও দুপুর ১২টার মধ্যেই বাড়ি ফিরতেন, অথচ বিদ্যালয় চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ে নতুন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নাসরিন বিনতে ইসলাম। তিনি রাহাতকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
পরে নাসরিন বিনতে ইসলাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে রাহাতকে অনুপস্থিত পান। তদন্তে তাঁর অনিয়ম ও মাদকাসক্তির বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
মন্তব্য করুন