শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় ছেলের মামলা

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫২ পিএম
বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় ছেলের মামলা
expand
বৃদ্ধের চুল-দাড়ি কাটার ঘটনায় ছেলের মামলা

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের (৭০) চুল ও দাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিডিওটি দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ তারাকান্দা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

মামলায় 'হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার কথা জানিয়েছেন থানার ওসি মো. টিপু সুলতান।

তিনি বলেন, ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের, তবে সম্প্রতি এর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নজরে আসে। ভুক্তভোগী পরিবার বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।

মামলা দায়েরের সময় হালিম উদ্দিন আকন্দ নিজেও থানায় উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে শহীদ আকন্দ, নাতি আলীম উদ্দিন আকন্দ ও ভাতিজা মো. ফারুক মিয়া।

তিনি বলেন, "সেদিন আমি বাজারে গেলে ওরা আমাকে জোর করে ধরে চুল-দাড়ি কেটে দেয়। তখন বাজারে লোকজনও কম ছিল। আমি বহু চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। আমি তখন আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম, এখন পরিবারের কথায় থানায় অভিযোগ করেছি। দেখি কী বিচার হয়।"

তিনি আরও জানান, চুল ও দাড়ি কাটার সময় উপস্থিত ছিল অন্তত ৮-৯ জন।

"তাদের মধ্যে আমাদের এলাকার নয়ন ও মজনুও ছিল। তারা এখনো এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং আমাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমার সামাজিক মর্যাদা নষ্ট করেছে। আমি বিচার চাই।"

তারাকান্দার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হালিম উদ্দিন আকন্দকে স্থানীয়রা ‘হালিম ফকির’ নামে চেনেন। মানসিকভাবে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপনকারী এই ব্যক্তি প্রায় ৩৭ বছর আগে হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরান (র.)-এর মাজার ভ্রমণের পর আধ্যাত্মিক জীবনে মনোনিবেশ করেন। তখন থেকেই তিনি মাথার জট, চুল ও দাড়ি না কেটে চলতেন। এক সময় কৃষিকাজে যুক্ত থাকলেও পরে কবিরাজি এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এলাকাবাসী তাকে সম্মান করতেন এবং তার বিরুদ্ধে আগে কোনো অভিযোগ ছিল না।

গত কোরবানির ঈদের আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে কিছু লোকজন হঠাৎ এসে তার জট, চুল ও দাড়ি কেটে দেয়। তিনি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হননি।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে হালিম উদ্দিনের মুখে উচ্চারিত আল্লাহ, তুই দেহিস-এই বাক্যটিই এখন প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

ময়মনসিংহ জেলা বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, হালিম উদ্দিন একজন কাদেরিয়া ও নকশবন্দিয়া অনুসারী দরবেশ। তার সঙ্গে যা করা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই কাজ করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।

স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এই ঘটনার নিন্দা ও বিচার দাবিতে প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন