

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় সরকারী নথিভুক্ত রাস্তা কেটে পুকুর করেছেন মহেন্দ্রনাথ রায় নামে এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি। এতে অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে ৬টি পরিবার।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টিপের বাজার এলাকার প্রভাবশালী মহেন্দ্রনাথ রায় তিন বছর আগে সরকারী নথিভুক্ত একটি রাস্তা কেটে করেছেন মস্তবড় একটি পুকুর। দেশ স্বাধিনের আগে থেকে এই রাস্তা হয়ে কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা সাপ্টিবাড়ির বিড়ানি হয়ে লালমনিরহাট শহরে যাতায়ত করত। সেই জনবহুল রাস্তাটির একটি অংশ বিলিন করে ব্যাক্তি মালিকানাধিনে পরিনত হয়েছে আর বিছু অংশ সরকারী নথিভুক্ত থাকলেও বাস্তরে প্রভাবশালী মস্তবড় পুকুর।
প্রথম দিকে স্থানীয়দের পুকুরের পাশ দিয়ে যাতায়তের জন্য রাস্তা করে দেন। পরবর্তিতে সে রাস্তাও পুকুরে ভেঙে নেয়া হয়। অবশেষে ব্যাক্তি মালিকানাধিন জমিতে ওই সব পরিবারের যাতায়তের রাস্তা করে দেন। দুই আগে মহেন্দ্রনাথ তার মালিকানাধিন মাত্র ৩ হাত দৈর্ঘের রাস্তাও বন্ধ করে অবরুদ্ধ করেন এলাকার ৬টি পরিবারকে।
এসব বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগি পরিবারের একজন সুকুমার রায় বাদি হয়ে দুই বছর আগে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ গিয়ে যাতায়তের রাস্তা খুলে দেন। এর কয়েক দিনের মধ্যে আবারও রাস্তাটি বন্ধ করে দেন মহেন্দ্রনাথের ছেলে মদন মোহন। এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ৬টি পরিবার। মাত্র তিন হাত দৈর্ঘ্যের এ রাস্তায় গর্ত করে কিছু কাটা ও জিআই তার দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
বাধ্য হয়ে সেখানকার বিশ্বনাথ ও সুনিল চন্দ্র ঘর বাড়ি রেখে সন্তানদের নিয়ে অন্যত্রে বসবাস শুরু করেন। বাকী ৪ পরিবার অন্য দিকে জমির আইল ও বাঁশ বাগানের বাঁকা জায়গা দিয়ে ঘুরে ঘুরে যাতায়ত করছেন। বর্ষাকালে তাদেরকে আরও চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাতায়ত রোগিদের পরিবহন ও ফায়ার সার্ভিসসহ লাশ বহন করাও কোন সুযোগ নেই এই ৬ পরিবারের। দেড় বছর আগে যীতেন্দ্রনাথের মা শীতবালা মারা যান। হাতে পায়ে ধরেও তার লাশ নেয়ার মত সুযোগ দেয়া হয়নি।
অবরুদ্ধদের একজন বৃদ্ধা কৃষ্ণাবালা বলেন, রাস্তা না থাকায় এক বছর ধরে ছেলে বাড়িতে আসে না। ছেলে নাটোর থেকে পাশের গ্রামে এসে দেখা করে চলে যায়। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ভিতরে আমরা কোন ভিনদেশি। আমাদের পাসপোর্ট আর ভিসা ছাড়া যাওয়া যাবে না। আমরা লাশও শ্বশানে নিতে পারি না।
অবরুদ্ধ বাসন্তি রানী বলেন, মা শিতবালা মারা যায় দেড় বছর আগে। তার লাশ নেয়ার জন্য একটু রাস্তা চেয়ে মহেন্দ্রের পা ধরেও রাস্তা পাইনি। অবশেষে ফসলের খেতের উপর দিয়ে লাশ শ্বশানে নিতে হয়েছে।
অবরুদ্ধ সুকুমার রায় বলেন, দুই বছর ধরে আমরা অবরুদ্ধ। সমাজের লোকজন একাধিকবার বসেছিল কোন ভাবে রাস্তা পাইনি আমরা। থানায় লিখিত দিয়েছিলাম, পুলিশ এসে রাস্তা খুলে দিলে আবার দুইদিন পরে বন্ধ করে দেয়। নিরুপায় হয়ে আর কোথাও যাইনি, খেতের আইল দিয়ে কোন রকম যাতায়ত করছি। রাস্তার কারনে, আমাদের ৬ পরিবারে বিয়ে সাদিও হচ্ছে না।
স্থানীয় কলেজ ছাত্র আতিয়ার রহমান রাজু বলেন, আমরা গ্রামবাসী অনেকবার অনুরোধ করেছি কিন্তু মহেন্দ্রনাথ মাত্র ৩হাত দৈর্ঘের রাস্তাটুকু দিতে রাজি হননি। অথচ তিনি সরকারী নথিভুক্ত রাস্তার প্রায় ৪০/৫০ হাত রাস্তা কেটে নিয়ে পুকুর করেছেন। অবরুদ্ধ এ ৬ পরিবারের যোগাযোগ সচল করতে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পল্লী চিকিৎসক ইউসুফ আলী বলেন, আমার বাড়ি কাকিনা হলে এখানে আমার চাষাবাদের জমি। জমিগুলোর ধান এ রাস্তা হয়ে গরুর গাড়িতে করে নিয়ে যেতাম। হঠাৎ দুই বছর আগে রাস্তা কেটে পুকুর করায় এখন রাস্তা নেই। মহেন্দ্রনাথ সরকারী রাস্তা দখলে নিয়ে অন্যদের অবরুদ্ধ করেছেন। বেদখল হওয়া সরকারী রাস্তা উদ্ধারের দাবি তার।
অভিযুক্ত মহেন্দ্রনাথ ও তার ছেলে মদন মোহন বলেন, কেউ চলাচল না করায় আমাদের জমির উপরের রাস্তা কেটে পুকুর করেছি, সরকার পারলে বের করে নিবে তার রাস্তা। আমাদের ব্যাক্তিগত জমিতে কাউকে হাঁটতে দিব না, এতে জেল জরিমানা হলেও রাস্তা দিব না। কার কি করার আছে করুক। আমরা কারও জমিতে হাটিও না।
সারপুকুর ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম মুকুল বলেন, চেয়ারম্যানকে একাধিকবার গ্রামবাসী বৈঠক করেছি, কিন্তু মহেন্দ্রনাথ রাস্তা দিতে রাজি হয়নি। আমরা অনেকটা ব্যর্থ হয়েছি। রাস্তা না থাকায় ৬টি পরিবার নিদারুন কষ্টে বসবাস করছে। দ্রুত রাস্তার ব্যবস্থা করতে ঊর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, সরকারী নথিভুক্ত রাস্তা বেদখলের সুযোগ নেই। সার্ভে করে দ্রুত রাস্তা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে অবরুদ্ধ ৬ পরিবারকেও মুক্ত করা হবে। কেউ এমনটা করে থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
