

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন কলেজছাত্র রাকিবুল ইসলাম স্বাধীন।
গত ১২ নভেম্বর লিবিয়ার বেনঘাজি উপকূলীয় এলাকা থেকে বিভিন্ন দেশের শতাধিক যুবকের সঙ্গে একটি স্পিডবোটে করে ইউরোপের দেশ ইতালিরর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
স্বাধীনের সঙ্গে একই বোটে থাকা ফজলুল হক জানান, যাত্রাপথে হঠাৎ স্পিডবোটটি উল্টে গেলে অনেকে সাগরে পড়ে যান। এরপর থেকে স্বাধীন নিখোঁজ রয়েছেন। তার কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ স্বাধীন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ভুতগাছা গ্রামের ফিরোজ আহমেদের ছেলে এবং তিনি একজন কলেজ ছাত্র ছিলেন। স্থানীয় জনতা দালাল আবুল কালামকে আটক করে উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আবুল কালাম উল্লাপাড়া উপজেলার ঘিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা।
স্বাধীনের বাবা ফিরোজ আহমেদ জানান, উক্ত আবুল কালামের ছেলে সাদ্দাম ইতালিতে থাকেন। এই সুবাদে আবুল কালাম বাংলাদেশ থেকে সেখানে লোক পাঠায়। তার সাথে যোগাযোগ করে ফিরোজের ছেলে স্বাধীনকে ইতালিতে পাঠানোর জন্য জমি জমা বন্ধক রেখে এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা ধার নিয়ে ২৫ লক্ষধিক টাকা কয়েকটি কিস্তিতে প্রদান করেন। চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে আবুল কালাম তার ছেলে এবং পাশ্ববর্তী পারতেতুলিয়া গ্রামের আব্দুল মোনায়েমের ছেলে ফজলুল হককে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। তাদেরকে প্রথমে ভারতের চেন্নাইতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিগত কয়েক মাসে দুবাই, মিশোর, শ্রীলংকা ও সর্বশেষ লিবিয়াতে নিয়ে যায়। লিবিয়া থেকে এ বছরের ১২ নভেম্বর স্পিডবোটে করে শতাধিক যুবককে ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠায় আবুল কালাম। কিন্তু ১২ নভেম্বরের পর থেকে তার ছেলের সঙ্গে পরিবারের কোন যোগাযোগ ছিল না। গতকাল স্বাধীনের সঙ্গে যাওয়া ফজলুল হক বাড়ি ফিরে এলে ফিরোজ তার (ফজলুল) নিকট থেকে জানতে পারেন ইতালি যাবার পথে যাত্রার কয়েকদিনের মধ্যেই স্পিডবোটটি ডুবে যায়।
স্বাধীনের সঙ্গে বিদেশ যাওয়া ফজলুল হক জানান, তারা বেশ কয়েক মাস ধরে চেন্নাই থেকে নৌ পথে দুবাই, মিশোর, শ্রীলংকা ও সর্বশেষ লিবিয়াতে গিয়ে পৌঁছান। লিবিয়ার উপকুলীয় অঞ্চলে একটি ঘরে তাদের রাখা হয়। তাদেরকে মাঝে মাঝেই মারধর করা হতো। সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। দিনে মাত্র একবার খেত দিত তারা। এ অবস্থায় পরবর্তীতে উক্ত তারিখে স্পিডবোটে বিভিন্ন দেশের শতাধিক যুবককে তুলে ইতালির অভিমুখে রওনা করায় দালালের লোকজন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই স্পিডবোট উল্টে সবাই ডুবে যায়। ফজলুল হক আরও জানান, অচেতন অবস্থায় ওখানকার কোন সংস্থা তাকে উদ্ধার করেন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বিমান যোগে বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থা করেন। তবে কোন সংস্থা তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠায় তা সঠিক বলতে পারেনি ফজলুল। ফজলুলের ধারণা স্বাধীন মারা গেছেন।
স্বাধীনের মা নার্গিস খাতুন শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে তার ছেলের ছবি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার ছেলের সন্ধান দাবি করেন। সেই সাথে দালাল আবুল কালামের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া পুলিশ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান শাকিল জানান, ফজলুল হকের নিকট থেকে খবর পেয়ে ফিরোজ আহমেদের পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় শনিবার দুপুরে দালাল আবুল কালামকে আটক করেন। পরে উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে আবুল কালামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। স্বাধীনের পরিবার থেকে এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মন্তব্য করুন
