সোমবার
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সোমবার
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫৪ বছরেও শিক্ষক সংকট কাটেনি, নেই নিরাপত্তা

মাহবুব হোসেন রনি, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
রায়পুর সরকারি কলেজ
expand
রায়পুর সরকারি কলেজ

আর কয়েকদিন পরই নতুন বছর শুরু হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সরকারি কলেজে সৃষ্টি হয়নি উপাধ্যক্ষ পদ। দীর্ঘদিন ধরে ৯টি বিভাগের শিক্ষক ও প্রদর্শকসহ ১০টি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য, নেই কলেজের সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তা প্রহরী। পাশাপাশি এখনো চালু হয়নি উচ্চশিক্ষার জন্য অনার্স কোর্স। ফলে কলেজটির প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

সীমানা প্রাচীর ও নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় কলেজ চত্বরে বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা অনেক সময় অনিরাপদ বোধ করেন। কলেজের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও শিক্ষাসামগ্রীও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাস কার্যত অরক্ষিত হয়ে পড়ে বলে জানান শিক্ষকরা।

জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণি শেষ করেই বাধ্য হয়ে লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী শহরে চলে যাচ্ছেন। দূর-দূরান্তে গিয়ে নিয়মিত ক্লাস করাও অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার স্থানীয়ভাবে সুযোগ-সুবিধার অভাবে অনেকের একাদশ শ্রেণির পরই শিক্ষাজীবন থেমে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য উপজেলা ছাড়িয়ে পড়াশোনা করা ক্রমেই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। শিক্ষক সংকট দূরীকরণ ও অনার্স কোর্স চালুর দাবি জোরালো করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বর্তমানে কলেজে যে শূন্য পদগুলো রয়েছে সেগুলো হলো—বাংলা, আইসিটি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক; প্রদর্শক (রসায়ন), প্রদর্শক (উদ্ভিদবিদ্যা); অফিস সহকারী, দক্ষ বেয়ারার ৩ জন, অফিস সহায়ক ৩ জন এবং নিরাপত্তা প্রহরী।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৭০ সালে জমিদার (মিঞা বাড়ির বংশধর) দানকৃত প্রায় ১৩ একর ভূমির ওপর রায়পুর সরকারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৮৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ কলেজটি জাতীয়করণ করেন। শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কোলাহলমুক্ত, সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশে কলেজটির অবস্থান। কলেজকে ঘিরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন এবং একটি সুবিশাল খেলার মাঠ রয়েছে।

শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে কলেজে ১৩ জন শিক্ষক ও প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকটের কারণে ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সরকারি কলেজ ছাড়াও উপজেলায় হায়দরগঞ্জ মডেল, রুস্তম আলী ডিগ্রি কলেজ, মহিলা কলেজ ও প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ রয়েছে। বেসরকারি কলেজগুলো থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারছে না। ফলে বহু শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বিজয় ও সুজন বলেন, রায়পুর সরকারি কলেজে বর্তমানে যোগ্য ১৩ জন শিক্ষক ও দক্ষ অধ্যক্ষ রয়েছেন। উপাধ্যক্ষ পদ সৃষ্টি এবং অন্তত ৮ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ জরুরি। এখানে শিক্ষার পরিবেশ ভালো এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাও পর্যাপ্ত। শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট দূর করে, ছাত্রাবাস নির্মাণ ও অনার্স কোর্স চালু হলে শিক্ষার্থীরা নিজ উপজেলাতেই উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পেত।

রায়পুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাশার বলেন, যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক সংকট নিরসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X